দেশি কোম্পানির বিদেশে ইকুইটি বিনিয়োগ নিয়ে অনেক দিন ধরেই আলোচনা চলছিল, অবশেষে তা আলোর মুখ দেখল। এটা জরুরি ছিল। বাংলাদেশের করপোরেট খাত গত ৩০ বছরে অনেকটাই বড় হয়েছে। এ খাতে গতি এসেছে। ভালো ভালো কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এখন তারা অন্য দেশে বিনিয়োগ করতে চাইবে, সেটাই স্বাভাবিক।
আমি মনে করি, এ সিদ্ধান্ত দেশের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণে বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে। তবে এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশিদের হাতেই থাকা উচিত।
একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সতর্ক থাকতে হবে—এ সুযোগের অপব্যবহার করে কেউ যেন বিদেশে অর্থ পাচার করতে না পারে। সে জন্য পুরো বিষয় সব সময় পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখা দরকার।
তবে বিনিয়োগের যে সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে—নিট সম্পদের ২৫ শতাংশ—তা নিয়ে আমার কিছু কথা আছে। বিষয়টি হচ্ছে দেশের বেশ কিছু কোম্পানির নিট সম্পদের পরিমাণ অনেক বেশি। সে বিবেচনায় শুরুতেই ২৫ শতাংশ বা মোট সম্পদের এক-চতুর্থাংশ বিনিয়োগের সীমা নির্ধারণ করা বেশি হয়ে গেছে।
কোম্পানিগুলোকে বুঝেশুনে ঠিক করতে হবে, কোন দেশে বা অঞ্চলে কোন খাতে বিনিয়োগ করা যায়। আফ্রিকা মহাদেশে তৈরি পোশাকের চাহিদা থাকবে। আবার কোথাও কোথাও ফার্মাসিউটিক্যাল খাতের সুযোগ থাকবে। তবে ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে বিনিয়োগ করতে গেলে সরাসরি নতুন খাতে বিনিয়োগ করা না–ও যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে স্থানীয় কোনো কোম্পানি কিনে কাজ শুরু করার সুযোগ থাকা উচিত। তবে এ মুহূর্তে কৃষি ও নির্মাণ খাতে বিনিয়োগ করা সমীচীন হবে না।
ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। তার ওপরই নির্ভর করে ব্যবসা কোন পথে যাবে। সে জন্য মনে করি, বিদেশে বিনিয়োগের ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি বাংলাদেশিদের হাতে থাকা দরকার। দেশে কিছু দক্ষ মানুষ তৈরি হয়েছেন। তাঁদের এ ক্ষেত্রে নেতৃত্বে নিয়ে আসা উচিত। আবার অনেকের জন্য এটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। স্থানীয় উৎস থেকে শ্রমিক নিয়োগ করা যেতে পারে, কিন্তু আবারও বলব, ব্যবস্থাপনা আমাদের হাতেই থাকা উচিত। আবার প্রাথমিক পর্যায়ে দেশ থেকে কিছু দক্ষ শ্রমিক নিয়ে যাওয়ার আবশ্যকতাও তৈরি হবে। সেটা আবার আমাদের শ্রমিকদের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।
উৎপাদন খাতের পাশাপাশি আমাদের সেবা খাতেও বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজতে হবে। সে জন্য অবশ্য দক্ষ মানবসম্পদ দরকার।
মোদ্দা কথা হলো অর্থনীতিতে আমরা এখনো স্থানীয় রয়ে গেছি। মেড ইন বাংলাদেশ ট্যাগ ছড়িয়ে দিতে হলে বিশ্বদরবারে যাওয়ার বিকল্প নেই।