অগ্রণীও লাখ কোটি টাকার ক্লাবে

সবশেষ লাখ কোটি টাকার ক্লাবে যুক্ত হলো রাষ্ট্র খাতের অগ্রণী ব্যাংক। এই ক্লাবে আরও আছে সোনালী ও ইসলামী

গ্রাহকের জমানো টাকায় বড় হচ্ছে ব্যাংকগুলো। যেসব ব্যাংক যত দ্রুত প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছেছে, ওই ব্যাংক তত দ্রুত আমানতে নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে। যেমন রাষ্ট্র খাতের সোনালী ব্যাংকের আমানত ২০১৬ সালেই ১ লাখ কোটি বা এক ট্রিলিয়ন টাকা ছাড়িয়ে যায়। আর এই লাখ কোটি টাকার আমানতের ব্যাংকের ক্লাবে গত বছরের জুনে যুক্ত হয় বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। সবশেষ এক ট্রিলিয়ন টাকার ক্লাবে যুক্ত হলো রাষ্ট্র খাতের অগ্রণী ব্যাংক। এর ফলে দেশের তিন ব্যাংক এখন এক লাখ কোটি টাকার আমানতের এলিট ক্লাবে ঢুকল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোতে আমানত ছিল ১২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। আর সোনালী, ইসলামী ও অগ্রণী ব্যাংকের সম্মিলিত আমানত এখন ৩ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে ব্যাংক আমানতের ২৭ শতাংশই এখন এ তিন ব্যাংকের হাতে।

আমাদের ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এলে ১ শতাংশ বেশি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। করোনায় কখনো অগ্রণী ব্যাংকের সেবা বন্ধ হয়নি। গ্রাহকের আস্থাও বেড়েছে। যার ফলে আমানত এক লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অগ্রণী ব্যাংক

ব্যাংকগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মে মাস শেষে সোনালী ব্যাংকের আমানত ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, তার বিপরীতে ঋণ দিয়েছে ৬১ হাজার কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকের আমানত ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা, তার বিপরীতে ঋণ ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা। আর মে মাস শেষে অগ্রণীর আমানত বেড়ে হয় ১ লাখ ৯০৩ কোটি টাকা, তার বিপরীতে ঋণ ৫২ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকারি ব্যাংকের পেছনে সরকার আছে, এ জন্য আস্থাও বেশি। তাই আমানত বেশি। তবে এসব ব্যাংকের উচিত হবে যাচাইবাছাই করে ঋণ দেওয়া। একজন গ্রাহক যেন বেশি ঋণ না পেয়ে যায়, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। যদি পুরোনো ভালো গ্রাহক না মেলে, তাহলে নতুন ভালো গ্রাহক তৈরিতে মনোযোগ দিতে হবে। কারণ, কর্মসংস্থান তৈরিতে শিল্পায়নের বিকল্প নেই। ভালো ছোট গ্রাহকের দিকে বিশেষ নজর দিতে পারে ব্যাংক তিনটি।’

আরও পড়ুন

সারা দেশে সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ২২৭টি শাখা রয়েছে, যা ছড়িয়ে আছে গ্রামগঞ্জে। সরকারের ট্রেজারি ব্যাংক হিসেবেও কাজ করে সোনালী ব্যাংক। এই কারণে সোনালী ব্যাংকের আমানত ২০১৬ সালেই ১ লাখ কোটি টাকার মাইলফলক ছুঁয়ে যায়। আমানতে বড় অর্জন থাকলেও ব্যাংকটি হল-মার্ক কেলেঙ্কারির পর চুপসে যায়। এখন ট্রেজারি কার্যক্রম ও ছোট ছোট ঋণ দিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে সোনালী ব্যাংক।

বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের সারা দেশে শাখা রয়েছে ৫৬১টি। আর ব্যাংকটির সেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ এজেন্ট। ফলে শাখা, উপশাখা ও এজেন্টের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের সেবা চলে গেছে মানুষের ঘরের কাছে। প্রবাসীদের পাঠানো আয় সবচেয়ে বেশি আসে এই ব্যাংকের মাধ্যমে, যার বড় অংশই জমা থাকে ব্যাংকে। ফলে ১৯৮৩ সালে কার্যক্রম শুরু করা ইসলামী ব্যাংক ২০২০ সালের জুনে ১ লাখ কোটি টাকার আমানত ছুঁয়ে যায়। ২০১৬ সালে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আসে।

জানা গেছে, স্বাধীনতার পর হাবিব ব্যাংক ও কমার্স ব্যাংক একত্র হয়ে ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ অগ্রণী ব্যাংক গঠিত হয়। শুরুতে আমানত ছিল মাত্র ৯৬ কোটি টাকা। গত মে মাসে যা ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ২০১৬ সালের আগস্টেও ব্যাংকটির আমানত ছিল প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা, যা গতকাল বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৩ কোটি টাকা। ব্যাংকটির আমানতের প্রায় ২৩ শতাংশই সরকারি খাতের। সারা দেশে সেবা দিতে ব্যাংকটির রয়েছে ৯৬০ শাখা ও ২৮০ এজেন্ট আউটলেট। ব্যাংকটির আমানতের তুলনায় ঋণ কম। একসময় চট্টগ্রামে জাহাজভাঙা ও নির্মাণ এবং ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ঋণ দিয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছিল ব্যাংকটি।

সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৫ সালেও জনতা ব্যাংকের অবস্থান ছিল অগ্রণীর চেয়ে ভালো। তবে অ্যাননটেক্স ও ক্রিসেন্ট গ্রুপের কেলেঙ্কারি জনতাকে পেছনে ফেলে দেয়। কিন্তু অগ্রণী ব্যাংক এগিয়ে গেছে। গত মে মাস শেষে জনতার আমানত ছিল ৮৯ হাজার কোটি টাকা, এর বিপরীতে ঋণ ছিল ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এলে ১ শতাংশ বেশি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। করোনায় কখনো অগ্রণী ব্যাংকের সেবা বন্ধ হয়নি। গ্রাহকের আস্থাও বেড়েছে। যার ফলে আমানত এক লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।’