ঋণ দিতে পারবে পদ্মা ব্যাংক

ঋণ দেওয়ার মতো তহবিল থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকটি। কোন খাতে কত ঋণ—সেটিও নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

পদ্মা ব্যাংক

অবশেষে ঋণ বিতরণের অনুমতি পেয়েছে বেসরকারি খাতের পদ্মা ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংকটি সীমিত আকারে ঋণ কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। ব্যাংকটির ঋণ দেওয়ার মতো যে তহবিল আছে, তার ৬০ শতাংশের বেশি ঋণ দিতে পারবে না। পাশাপাশি কোন খাতে কত ঋণ দিতে পারবে, তা-ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে প্রায় সাড়ে তিন বছর পর আবার ঋণ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে পদ্মা ব্যাংক, যার আগের নাম ছিল ফারমার্স ব্যাংক।

সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ বিতরণে নানা অনিয়মের কারণে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটির ঋণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ঘটে। নাম বদলে হয় পদ্মা ব্যাংক। এখন পদ্মা ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ কার্যক্রম শুরুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ঋণ প্রদানের সুযোগ না থাকায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। আর ঋণ দেওয়ার সুযোগ না থাকায় ব্যাংকটি লোকসানেও ছিল। এখন নতুন করে শুরু করতে পারব।
এহসান খসরু, এমডি, পদ্মা ব্যাংক

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঋণ বিতরণে বড় অনিয়ম ও জালিয়াতি হওয়ায় ব্যাংকটির ঋণ কার্যক্রম প্রায় চার বছর বন্ধ রাখা হয়েছিল। এখন ব্যাংকটির মালিকানার সঙ্গে সরকারি ব্যাংকগুলো যুক্ত হয়েছে। এ কারণে ঋণ কার্যক্রম শুরুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে পুরোপুরি নয়, সীমিত আকারে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংকটি।

গত ২৬ আগস্ট পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ বিতরণ শুরুর অনুমতি দেয়। এতে বলা হয়, ঋণ দেওয়ার মতো যে তহবিল থাকবে, তার ৬০ শতাংশের বেশি ঋণ দেওয়া যাবে না। বর্তমানে প্রচলিত ধারার একটি ব্যাংক আমানতের ৮৭ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, পদ্মা ব্যাংক উৎপাদন খাতের একজন গ্রাহককে সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি, সেবা খাতের গ্রাহককে সর্বোচ্চ তিন কোটি ও এসএমই খাতে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া যাবে। তবে ঋণপত্র ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো সীমা দেওয়া হয়নি। পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন ছাড়া কোনো ঋণ বিতরণ করা যাবে না।

ঋণ কার্যক্রম শুরুর অনুমতি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এহসান খসরু। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখন ঋণপণ্যের নকশা করছি। আগামী মাস থেকেই ঋণ কার্যক্রম শুরু হবে। সব ঋণ প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমোদিত হবে। প্রতিটি ঋণের প্রকল্প পরিদর্শন করা হবে, যাতে কোনো ধরনের ঘাটতি না হয়।’

এহসান খসরু আরও বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব প্রণোদনার ঋণ বিতরণের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করার। কারণ, অর্থনীতিকে টেনে তুলতে এখন ঋণ প্রদান খুবই জরুরি। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঋণ প্রদানের সুযোগ না থাকায় প্রায় ৮০০ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। আর ঋণ দেওয়ার সুযোগ না থাকায় ব্যাংকটি লোকসানেও ছিল। এখন নতুন করে শুরু করতে পারব।’

পদ্মা ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত আগস্ট শেষে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সাল থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকটি খেলাপি ঋণ থেকে নগদ আদায় করেছে ২৬৪ কোটি টাকা।

ব্যাংকটি জানায়, খেলাপি ঋণের টাকা নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের (এনআই অ্যাক্ট) অধীনে আদায়ে ৯৩৯টি মামলা করা হয়েছে। এর বিপরীতে পাওনা ৩ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা। মামলার ফলে অনেক গ্রাহক ঋণের টাকা পরিশোধে এগিয়ে আসছে।

রাজনৈতিক বিবেচনায় বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে অনুমোদন পাওয়া নতুন নয়টি ব্যাংকের একটি ছিল সাবেক ফারমার্স ব্যাংক। ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরুর পর বছর না ঘুরতেই ঋণ অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে ব্যাংকটি। এতে চরম আর্থিক সংকটে পড়লে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। ব্যাংকটির নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক মাহাবুবুল হক চিশতীকেও পদ ছাড়তে হয়। এরপর ১৯ ডিসেম্বর দায়িত্বে অবহেলা ও ব্যাংক পরিচালনায় ব্যর্থতার দায়ে ব্যাংকের এমডি এ কে এম শামীমকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।