বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ
প্রণোদনা ঋণের ব্যবহার খতিয়ে দেখা হচ্ছে
ব্যাংকগুলোতে পরিদর্শন শুরু হয়েছে। পরিদর্শনক্ষমতায় যে লাগাম দেওয়া হয়েছিল, চার বছর পর তা তুলে নেওয়া হয়েছে।
করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সরেজমিন পরিদর্শন কার্যক্রম। সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যাংকগুলোতে পরিদর্শন শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি কর্মকর্তাদের পরিদর্শনক্ষমতায় যে লাগাম দেওয়া হয়েছিল, তা–ও চার বছর পর খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কর্মকর্তারা এখন প্রয়োজনমতো ঋণের যথাযথ ব্যবহার যাচাইয়ের জন্য প্রকল্পের অস্তিত্ব, পণ্যের মূল্য যাচাইসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালাতে পারবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির এসব অনুমোদন করেছেন।
করোনার কারণে অর্থনীতির ধাক্কা সামলাতে কম সুদের যে প্রণোদনা ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তা যাচাইয়ে মাঠে নেমেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি করোনার মধ্যে যেসব ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ছাঁটাই করা হয়েছে, ওই ব্যাংকগুলোতেও চলছে পরিদর্শন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পরিদর্শনের সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা কী নীতিমালা মেনে চলবেন, তা উল্লেখ আছে অন সাইট সুপারভিশন নীতিমালায়। ২০১৭ সালের ২৪ জুলাইয়ে করা ওই নীতিমালায় নতুন করে তিনটি বিষয় যুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, পরিদর্শন চলাকালে কোনো ঋণ হিসাব গুণগত মানের ভিত্তিতে বিরূপভাবে শ্রেণীকরণের (খেলাপি) বিষয়ে বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের অনুমোদন নিতে হবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট নির্বাহী পরিচালক ও ডেপুটি গভর্নরকে অবহিত করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো শাখা অফিস এমন কার্যক্রম চালালে প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। এ ছাড়া কোনো ব্যাংক পরিদর্শক দলের আপত্তির বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ডেপুটি গভর্নরের অনুমোদন লাগবে। ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে কি না, তা পরিদর্শন করতে ডেপুটি গভর্নর পর্যন্ত অবহিত করতে হবে।
ব্যাংকঋণের যথাযথ ব্যবহার হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে প্রকল্পের অস্তিত্ব ও পণ্যের মূল্য যাচাই করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ২০১৭ সালে পরিদর্শন নীতিমালা পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শকদের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়। এর ফলে পরিদর্শন কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। বড় ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি আড়ালে থেকে যায়।
গত ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এক অভ্যন্তরীণ নথিতে পরিদর্শন বিভাগগুলোকে জানায়, শিল্প ও সেবা খাতের জন্য দেওয়া কম সুদের প্রণোদনা ঋণের ৩২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। প্রণোদনার ঋণের অর্থ অনুৎপাদনশীল খাতে যাওয়ার পাশাপাশি অন্য ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেটি হলে তা হবে প্রণোদনার মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এ জন্য সরেজমিন পরিদর্শনে কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখার জন্য বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যারা ঋণ নিয়েছে, তারা আসলেই ক্ষতিতে পড়েছে কি না, প্রণোদনা ঋণ নিয়ে অন্য ঋণ সমন্বয় করা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রণোদনার ঋণ দিয়ে অন্য ঋণের ডাউন পেমেন্টে ব্যবহার, নতুন ব্যবসা সম্প্রসারণ ও অনুৎপাদন খাতে ব্যবহার হলে, তা–ও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রণোদনা ঋণের যেকোনো ধরনের অনিয়ম ধরা পড়লে, তা–ও খতিয়ে দেখবে পরিদর্শক দল। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮টি পরিদর্শন বিভাগ এবং ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি ও কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগের কর্মকর্তারা ইতিমধ্যে পরিদর্শন কাজ শুরু করেছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঋণের ব্যবহার খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে গ্রাহকের প্রকল্পও পরিদর্শন করবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো অনুমোদন লাগবে না।