সাক্ষাৎকার : সেলিম আর এফ হোসেন
ব্র্যাক ব্যাংককে আনাচকানাচে ছড়িয়ে দিতে চাই
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠার দুই দশক পার করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ব্যাংক ও দেশের ব্যাংকিং খাতের নানা দিক নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ফখরুল ইসলাম।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ব্র্যাক ব্যাংক সম্প্রতি প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পার করেছে। কেমন ছিল এ যাত্রা?
সেলিম আর এফ হোসেন: ব্যাংকটির স্বপ্নদ্রষ্টা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। ব্র্যাকের জন্য ৪৬ শতাংশ মালিকানা নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতকে বলা হয় শিল্প, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের মূল ভিত্তি। আমাদের দেশেও তা-ই। কিন্তু আমাদের দেশে এই খাতের সঙ্গে জড়িতরা সেভাবে ব্যাংক ঋণ পাচ্ছিলেন না। এ রকম পরিস্থিতিতে দেশের এসএমই, এমনকি কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) সঙ্গে জড়িতদেরও ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার কথা ভাবলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ব্র্যাক ব্যাংক কি এখনো এসএমই বা সিএমএসএমই খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে চলছে?
সেলিম আর এফ হোসেন: অবশ্যই। ব্র্যাক ব্যাংকের মোট ঋণের ৫৩ শতাংশই গেছে এই খাতে। বাকি ঋণের মধ্যে ৩০ শতাংশ করপোরেট খাতে ও ১৭ শতাংশ খুচরা পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে অন্য ব্যাংকগুলো যে এসএমই খাতে নজর দিচ্ছে, তার পেছনেও রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকেরই অবদান।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: অন্য ব্যাংকগুলোর তুলনায় ব্র্যাক ব্যাংককে আপনি কেন এগিয়ে রাখতে চাইবেন?
সেলিম আর এফ হোসেন: এক কথায় বললে, ব্র্যাক ব্যাংক একটি ‘মূল্যবোধভিত্তিক’ ব্যাংক। শুধু ব্যবসা করার জন্য এ ব্যাংকের জন্ম হয়নি। মূল্যবোধের বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করি, তামাক উৎপাদন বা তামাকের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ব্যবসা কিংবা জাহাজ ভাঙার সঙ্গে জড়িত কোনো কাজেও আমরা ঋণ দিই না। যদিও এসব খাতে ঋণ দিলে আমাদের ভালো মুনাফা হতো।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: করোনায় তো ক্ষুদ্র ও মাঝারিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ব্যাংকের ঋণ আদায় কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কীভাবে মোকাবিলা করলেন?
সেলিম আর এফ হোসেন: ব্যবসায়ীদের সুরক্ষায় সরকারের দেওয়া সময়োচিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো ভালো কাজে দিয়েছে। করোনার মাঝখানে ৫ হাজার ৫০০ গ্রাহকের নানা দিক নিয়ে জরিপ করি অন্তত পাঁচবার। দেড় বছর ধরেই তাঁদের আদ্যোপান্ত খোঁজ নেওয়া হয়েছে, যা একটি তথ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করেছে। গ্রাহক ধরে ধরে সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করেছি আমরা।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: এসএমই ঋণে সুদের হার বেশি। সুদ যখন ৯ শতাংশ হয়ে গেল, কীভাবে সামাল দিলেন?
সেলিম আর এফ হোসেন: এসএমই ঋণ দেওয়ার খরচ বেশি। এ কথাও সত্য গ্রাহকদের কাছে সুদের হার কোনো ব্যাপার না। তাঁরা দেখতে চান সময়মতো টাকাটা পাচ্ছেন কি না। ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশ মনে করে, ব্যাংক সুদ নিক, কিন্তু ঋণটা তাড়াতাড়ি দিক। ১৬ শতাংশ থেকে সুদ যখন ৯ শতাংশে নেমে এল, তখন আমরা দেখলাম, ১০০ টাকা আয়ের বিপরীতে আমাদের খরচ ১৭০ টাকা। তখন ‘ব্র্যাক ব্যাংক গেল, গেল’ বলে অনেকেই ভয় দেখালেন। দেড় বছরের ব্যবধানে ১০০ টাকা আয়ের বিপরীতে খরচ নামিয়ে আনলাম ৮০ টাকায়। এ বছর তা ৭০ টাকায় নামিয়ে আনব।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: এত অভাবনীয় ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা! কীভাবে সম্ভব হল?
সেলিম আর এফ হোসেন: কোভিড মহামারি আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমি বলব তা সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে। প্রযুক্তিতে আমরা ৩ কোটি মার্কিন ডলার অর্থাৎ ২৫৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করব। প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকলে ব্যাংক মরে যাবে। আগে অবশ্য এটি সাধারণ মানের ব্যাংকই ছিল। ছয় বছরে এটিকে অন্য মাত্রায় তুলে আনতে পেরেছি।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ভবিষ্যতে কত দূর যাবে ব্র্যাক ব্যাংক?
সেলিম আর এফ হোসেন: ভালো একটি লক্ষ্যে পৌঁছাতে বড় একটি লাফ দেওয়ার জন্য ব্র্যাক ব্যাংক এখন প্রস্তুত। এ জন্য সময় লাগবে তিন থেকে চার বছর। এই লাফ দেওয়ার পেছনেও রয়েছে স্যার ফজলে হাসান আবেদের অনুপ্রেরণা। তিনি একটি কথা বলতেন, ‘স্মল ইজ বিউটিফুল, বাট বিগ ইজ ইম্পেক্টফুল।’ভালো প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংককে দেশের আনাচকানাচে ছড়িয়ে দিতে চাই।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: ব্যাংকগুলো যে ২০২১ সালে ভালো পরিচালন মুনাফা করেছে বলে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, এর ভিত্তি, বাস্তবতা ও সত্যতা কতটুকু?
সেলিম আর এফ হোসেন: এর কোনো ভিত্তি নেই। গণমাধ্যমে প্রতিবছর এই বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশিত হয়, যা অন্যায়। তথ্যগুলোও অনিরীক্ষিত। ফলে এগুলোর দুই পয়সার দাম নেই। এগুলো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।