এসএমই খাতের উন্নয়নে দরকার তিন পদক্ষেপ

ব্যাংকের বাইরে দেশে যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার মধ্যে এসএমই খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ঋণ বিতরণ করে আইডিএলসি ফাইন্যান্স। আর এ খাতের উন্নয়নে কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। বিশ্ব এমএসএমই দিবস সামনে রেখে এ খাত নিয়ে কথা বলেছেন আইডিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম জামাল উদ্দিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্র বাণিজ্য প্রতিবেদকশফিকুল ইসলাম

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: দেশের উন্নয়নে সিএমএসএমই খাত সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে খাতটি কেমন করছে?

এম জামাল উদ্দিন: দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বা এসএমই খাত। যেকোনো দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এ খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও মোট দেশজ উৎপাদনের বা জিডিপির ২৫ শতাংশই কুটিরশিল্প, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতের অবদান। এ খাতে ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এ খাতের গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি পুনঃ অর্থায়ন সুবিধার মাধ্যমে এই খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এই খাতের উদ্যোক্তাদের যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন, সেই ব্যবস্থা কি দেশে আছে?

এম জামাল উদ্দিন: যেকোনো দেশেই এসএমই খাতের উন্নয়নে তিনটি পদক্ষেপের দরকার হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এসএমই ঋণ প্রদানে বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলোকে শক্তিশালী করা, উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং এ খাতের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন। প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে তাকালেও আমরা দেখতে পাই, এই তিনটি পদক্ষেপ তাদের এসএমই খাতের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের দেশেও সব ব্যাংক এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো
এই পদক্ষেপগুলোকে
অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে
বিবেচনা করছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এই খাতে আপনাদের ঋণের পরিমাণ ও গ্রাহকসংখ্যা কেমন?

এম জামাল উদ্দিন: আইডিএলসি ফাইন্যান্স সব সময়ই অর্থনীতিতে এসএমই খাতের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে। অন্যান্য ঋণের তুলনায় এই খাতে ঋণ প্রদানে খরচ বেশি। তারপরও আমরা ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে এসএমই ঋণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমাদের মোট ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশই এসএমই খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। ২০২১ সাল শেষে আমাদের এসএমই গ্রাহকের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৭ হাজার। আর এ খাতে বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ হাজার ২০২ কোটি টাকা।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: করোনায় এই খাত ক্ষতির মুখে পড়েছিল, সেখান থেকে কি ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে?

এম জামাল উদ্দিন: করোনার সময়ে এই খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। এ কারণে এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আলাদা করে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, আইডিএলসি ফাইন্যান্স এই প্রণোদনা প্যাকেজের শতভাগ বাস্তবায়ন করেছে। এ খাতের কিছুসংখ্যক উদ্যোক্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বেশির ভাগ উদ্যোক্তা করোনার প্রভাব মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: উদ্যোক্তারা কি পণ্যের যথাযথ মান নিশ্চিত করতে পারছেন। পণ্যের দাম কি পাচ্ছেন?

এম জামাল উদ্দিন: এসএমই উদ্যোক্তারা তাঁদের পণ্যের গুণগতমান উন্নত করার জন্য ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছেন । কিছুসংখ্যক এসএমই উদ্যোক্তা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য সম্প্রতি বিদেশে রপ্তানি শুরু করেছেন। আর আমরা জানি, বিদেশে রপ্তানি করতে হলে যেকোনো পণ্যের যথাযথ মান থাকা বাঞ্ছনীয়। এই খাতের পণ্যের যথাযথ দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় মধ্যস্বত্বভোগী। সরবরাহপ্রক্রিয়ায় যত কম মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে, পণ্যের দাম তত বেশি ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার নাগালে চলে আসবে। একইভাবে উদ্যোক্তারাও তাঁদের পণ্যের সঠিক দাম পাবেন।