করোনার প্রভাব কাটাতে করভার পুনর্বিন্যাসের দাবি
করোনার প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে শিল্প খাতে করভার পুনর্বিন্যাসের দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই)। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এই প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের বঙ্গবন্ধু সম্মেলনকক্ষে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চট্টগ্রাম চেম্বারের পক্ষ থেকে শিল্প খাতে করভার পুনর্বিন্যাস করাসহ ১৪ দফা প্রস্তাব দেয়।
আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আসা প্রস্তাবগুলোর সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও রাজস্ব আহরণের উপযোগী বাজেট চাই।’ করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির করহার কমানো, পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত নিট পরিসম্পদের ওপর সারচার্জ শূন্য শতাংশ করার প্রস্তাব দেন তিনি। বর্তমানে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত নিট পরিসম্পদ সারচার্জমুক্ত।
মাহবুবুল আলম বলেন, ইস্পাতশিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর রয়েছে। বাজারজাতকরণ ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর সমন্বয়ের বিধান থাকলেও ইস্পাতশিল্পের উদ্যোক্তাদের হাজার কোটি টাকা আটকে আছে রাজস্ব বিভাগে। অথচ ছয় মাসের মধ্যে অগ্রিম কর সমন্বয়ের কথা। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দুই মাসের মধ্যে অগ্রিম কর সমন্বয় করে ব্যবসায়ীদের ফেরত দেওয়ার বিধান করার প্রস্তাব দেন তিনি। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা অর্থ উদ্যোক্তাদের ফেরত দেওয়ার দাবিও জানান সিসিসিআইর সভাপতি।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি এলপিজি খাতে খুচরা বিক্রির ওপর ৫ শতাংশ মূসক প্রত্যাহার করে ট্যারিফ মূল্য চালুর প্রস্তাব দেন। এ ছাড়া সিলিন্ডারের কাঁচামাল আমদানিতে করভার থাকায় প্রস্তুত সিলিন্ডার বিক্রির ওপর থেকে মূসক তুলে নেওয়ারও প্রস্তাব করেন তিনি।
এদিকে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের চট্টগ্রামের সভাপতি আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণ মানুষের বাসস্থানের জন্য স্বল্পসুদের ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল চাই। কালোটাকা ও অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা দরকার। না হলে লন্ডন বা মালয়েশিয়ার মতো সেকেন্ড হোমে কালোটাকা চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’
রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, শুধু কর আদায় করাই সরকারের একমাত্র কাজ নয়। বরং স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ও রক্ষা, দেশীয় উৎপাদন, স্বনির্ভরতা অর্জন, পরিবেশ সুরক্ষা—এসব কথা চিন্তা করেই করারোপ করা হয়। যেমন প্রস্তুত পণ্যে কর বসানো হয় দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে। হিসাব স্বচ্ছ হলে রাজস্ব বা কর নিয়ে ভয় নেই।
সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী, সিসিসিআইর পরিচালক এ কে এম আক্তার হোসেন, সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, কনফিডেন্স সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
মেট্রোপলিটন চেম্বার
এদিকে গতকাল বিকেলে রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে অপর এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় চিটাগাং মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিএমসিসিআই) সভাপতি খলিলুর রহমান ছয়টি প্রস্তাব তুলে ধরেন। করপোরেট কর সহনীয় পর্যায়ে রাখার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, এটি করা হলে বিনিয়োগ, শিল্পায়নসহ রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা বাড়বে।
সভায় সিএমসিসিআইর সহসভাপতি মোহাম্মদ আবদুছ সালাম, জসিম উদ্দিন চৌধুরী, পরিচালক আবুল বশর চৌধুরী, আমিনুজ্জামান ভূঁইয়া, লিয়াকত আলী চৌধুরী, আমীর আলীহোসাইন, অজিত দাশ, পিএইচপি অটোমোবাইলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আক্তার পারভেজ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।