সদ্য বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছর
করোনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদেশি ঋণ
টানা দুই বছর রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। সে ঘাটতি কিছুটা পুষিয়ে দিচ্ছে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া ঋণ।
করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই কমে গেছে রাজস্ব আদায়ের গতি। তবে অভ্যন্তরীণ আয় কমে গেলেও বিদেশি ঋণে গতিসঞ্চার হয়েছে। তিন বছর আগেও বিদেশি ঋণ ছাড় হয়েছিল ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের মতো। করোনার মধ্যে সেটি বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। কারণ হিসেবে নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, করোনার কারণে বহুজাতিক সংস্থাগুলো প্রতিশ্রুত অর্থ দ্রুত ছাড় করছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭১০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ, স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৬০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা (প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৫ টাকা হিসাবে। এর মধ্যে ঋণ ছিল প্রায় সাড়ে ৫৭ হাজার কোটি টাকা। আর বাকি টাকা পাওয়া গেছে অনুদান হিসেবে। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিদেশি ঋণ এসেছে। ওই বছর ৭৩৮ কোটি ডলার ঋণ পাওয়া গিয়েছিল, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ছিল ৬২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। সে হিসাবে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদেশি ঋণ ছাড় হয়েছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ঋণ পাওয়া গেছে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে। সংস্থাটি ২৭০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড় করেছে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২২ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছাড় করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১৭০ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।
গত ছয় অর্থবছরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ ছাড়ের প্রবণতা বাড়তে থাকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে। ওই বছরই এক লাফে অর্থ ছাড় ৩০০ কোটি থেকে ৬৩৭ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। তারপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসেছিল ৬৫৪ কোটি ডলার। তবে গত দুই বছর টানা ৭০০ কোটি ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ পাওয়া গেছে। করোনা মহামারি থেকে উত্তরণে টিকাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কিনতে বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অন্যান্য সহযোগী সংস্থা বাড়তি ঋণ দিচ্ছে।
জানতে চাইলে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব পিয়ার মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ভালোই ঋণ ছাড় হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের গতিও বেড়েছে। উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। এসব কারণে বিদেশি ঋণ ছাড় দিন দিন বাড়ছে।
এদিকে এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে শুল্ক-কর আদায়ে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছে। এটি সংশোধিত লক্ষ্যের তুলনায় ঘাটতি। এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের এ ঘাটতি কিছুটা পুষিয়ে দিচ্ছে উন্নয়ন সহযোগীদের দেওয়া ঋণ।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, করোনার এ সময়ে বাংলাদেশকে ঋণ দিতে এগিয়ে এসেছে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এশিয়ান অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। এর মধ্যে বাজেট সহায়তাসহ বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার বা ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা, আইএমএফ বাজেট সহায়তা বাবদ ৫০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। চীনের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এআইআইবি দিচ্ছে ৫০ কোটি ডলার। আর এডিবি বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে। আর স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনাকাটা ও সামাজিক সুরক্ষার জন্য ঋণ দিচ্ছে আরও ২৫ কোটি ডলার। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৯ হাজার কোটি টাকা বিদেশি ঋণ পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।