করোনায় ফ্রিজের বাজারও মন্দা
কোরবানির ঈদ এগিয়ে এলে বিক্রি বাড়ে ফ্রিজের, বিশেষ করে ডিপ ফ্রিজের। করোনার সংক্রমণের দ্বিতীয় বছরে এসে কোরবানিতে রেফ্রিজারেটর ও ডিপ ফ্রিজের বিক্রি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে গেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েও তা অর্জন করতে পারছে না ফ্রিজ আমদানিকারক ও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো।
ফ্রিজ বিক্রির সঙ্গে জড়িত একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২৮ থেকে ৩০ লাখ ইউনিট ফ্রিজ বিক্রি হয়, যার ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ বিক্রি হয় কোরবানি ঈদের এক মাসের মধ্যে। ডিপ ফ্রিজের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ বিক্রি এ সময়ের মধ্যে। এ বছর কোরবানির আগে মাত্র সাত দিন খোলা ছিল মার্কেট ও বিপণিবিতান, ফলে বিক্রির লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি বিক্রেতারা।
গত সোমবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ইলেকট্রনিকস মার্কেটে ঘুরে দেখা যায়, মার্কেট প্রায় ক্রেতাশূন্য। এ মার্কেটে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইলেকট্রনিকসের দোকান রয়েছে। কোরবানির ঈদ ছাড়াও স্বাভাবিক সময়ে ক্রেতাদের সমাগমে জমজমাট থাকে মার্কেটটি। এক মার্কেটের একটি দোকান গোল্ডেন ইলেকট্রনিকসের বিক্রয়কর্মী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরও ঈদের আগে প্রতিদিন সাত আটটি ফ্রিজ বিক্রি করেছি। এ বছর তার অর্ধেকেও পৌঁছাতে পারছি না। গতকাল সারা দিনে মাত্র তিনটা ফ্রিজ বিক্রি হয়েছে, আজ বেলা দুইটা পর্যন্ত বিক্রি হয়নি একটি ফ্রিজও।
স্টেডিয়াম মার্কেটের প্রায় সব দোকানের অবস্থাই গোল্ডেন ইলেকট্রনিকসের মতো। মার্কেটে খুব অল্পসংখ্যক ক্রেতা লক্ষ করা যায়। বিক্রেতারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন পণ্য বিক্রি করতে। কোনো কোনো দোকানে ফ্রিজের সঙ্গে মাইক্রোওয়েভ ওভেন, অন্য কোনো পণ্য বা নগদ ছাড় দিয়েও আকৃষ্ট করতে পারছেন না ক্রেতাদের।
মন্দের ভালো দেশীয় ব্র্যান্ডের বিক্রি
ফ্রিজের বাজার খুব ভালো না হলেও যা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে সন্তুষ্ট দেশীয় ব্র্যান্ড ওয়ালটন। দেশের ফ্রিজের বাজারের ৭০% হিস্যা তাদের। ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরের ব্যবসাপ্রধান আনিসুর রহমান মল্লিক প্রথম আলোকে জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ওয়ালটন মেগা অফার দিয়েছে। এ ছাড়া দেশের সব প্রান্তে ওয়ালটনের শোরুম থাকায় ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে আরেক দেশীয় প্রতিষ্ঠান ভিশনের ব্যবসা প্রবৃদ্ধিতে থাকলেও বিক্রি আশানুরূপ নয় বলে জানিয়েছে ভিশনের মূল প্রতিষ্ঠান প্রাণ–আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল। প্রতিষ্ঠানটি এ বছর দুই লাখ ফ্রিজ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।
বিদেশি ব্র্যান্ডে আগ্রহ কম ক্রেতাদের
বিদেশ থেকে আমদানি করা ফ্রিজের বাজার দেশীয় ফ্রিজের চেয়ে খারাপ। ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক সৈকত আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরগুলোর তুলনায় বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পেরেছি, তবে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছানো গেছে। প্রতিষ্ঠানটি স্যামসাং, হিটাচির মতো বিদেশি ব্র্যান্ডের ফ্রিজ বিক্রি করে থাকে।
আরেক বহুজাতিক ফ্রিজ আমদানিকারক সনি-র্যাংগসের মন্দ যাচ্ছে ব্যবসা। ২০১৯ সালে কোরবানির আগের মাসে প্রতিষ্ঠানটি ৩৫ হাজার ইউনিট ফ্রিজ বিক্রি করেছে। এ বছর রোববার পর্যন্ত বিক্রি ছিল ১৫ থেকে ২০ হাজার ফ্রিজ।
কঠিন হয়েছে অনলাইন বিক্রি
গত বছর লকডাউনে অনলাইনে বিপুল পরিমাণে টিভি এবং ওয়াশিং মেশিন বিক্রি হলেও ফ্রিজের ক্ষেত্রে তেমন সারা পাওয়া যায়নি ক্রেতাদের। একাধিক ব্র্যান্ডের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো ব্র্যান্ডই ৫ শতাংশের বেশি ফ্রিজ অনলাইনে বিক্রি করতে পারেননি। একমাত্র মিনিস্টার গ্রুপ দাবি করে, তাদের মোট বিক্রির ২০ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে।
অনলাইনে বিক্রির ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহ করতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানগুলো। বাংলাদেশে এলজির পরিচালনা অংশীদার ও বাংলাদেশি ব্র্যান্ড ইকো প্লাসের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাটারফ্লাই লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বলেন, পরিবহন ব্যয় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এর চেয়েও বড় সমস্যা, পণ্য সরবরাহ করার মতো পরিবহন পাওয়া যাচ্ছে না।