অনেক জল্পনাকল্পনার পর দেশে শেষ পর্যন্ত কর্মসংস্থানবিষয়ক কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার হচ্ছে। আর এ তথ্যভান্ডার তৈরির জন্য প্রথমবারের মতো গঠন করা হচ্ছে ‘কর্মসংস্থান অধিদপ্তর’। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২–২৩ অর্থবছরের বাজেটে বক্তৃতায় বিষয়টি তুলে ধরেন।

কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডারে দেশের বেকার জনসংখ্যার জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষা, প্রশিক্ষণসহ কর্মসংস্থানবিষয়ক সব তথ্য থাকবে। এ জন্য কর্মসংস্থান অধিদপ্তর গঠনের কাজ চলছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, শিশুশ্রম নির্মূল এবং নারী শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতে সরকারের কার্যক্রম আরও বেগবান করা হবে।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কোন খাতে কত পদ খালি ও দেশে কর্মসংস্থানের কী ব্যবস্থা—এগুলো তথ্যভান্ডারে থাকবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে কাজের ধরন পরিবর্তন হবে। এতে কী ধরনের সুযোগ তৈরি হবে, সেসব বিষয়ে গবেষণা করবে কর্মসংস্থান অধিদপ্তর।

শ্রম বিষয়ে আইনকানুন ও বিধিবিধান তৈরি করা, অর্থাৎ শ্রমিক ও মালিকদের নিয়েই চলবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মূল কাজ। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা নিয়ে এত দিন তেমন কোনো কাজ করা হয়নি। কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে নতুন অধিদপ্তর।

অন্যান্য অধিদপ্তরের মতো কর্মসংস্থান অধিদপ্তরেরও প্রধান নির্বাহী হবেন একজন মহাপরিচালক। অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হবে ঢাকায়। প্রাথমিকভাবে আটটি বিভাগে অধিদপ্তরের কার্যালয় স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে আট বিভাগে গড়ে তোলা হবে আটটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র। পরে জেলা পর্যায়েও কার্যালয় স্থাপন করা হবে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের শ্রম খাতসম্পর্কিত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০২১-২৬ অনুযায়ী কারখানাসমূহের ঝুঁকির ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ ও শ্রম পরিদর্শন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্তকরণের লক্ষ্যে কারখানা পরিদর্শন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তাই দেশের কর্মক্ষম শ্রমশক্তিকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতির গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩৫৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন তিনি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, শ্রমের উৎপাদনশীলতা বাড়লে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরির প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হবে, যা তাঁর জীবনমানের উন্নতি ঘটাবে। এ লক্ষ্যে সরকার দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। চলমান ও ভবিষ্যতের শিল্প-বাণিজ্যের চাহিদা বিবেচনায় রেখে শ্রমিকের দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে সরকার ‘স্কিলস্ ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইআইপি) মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রশিক্ষণের মানোন্নয়ন, দক্ষ প্রশিক্ষক তৈরি, আন্তর্জাতিক সনদ প্রদান ইত্যাদি বিষয়েও কার্যক্রম পরিচালনা করে এসইআইপি প্রকল্প দেশের মানবসম্পদ ও দক্ষতা উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এ প্রকল্পের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে সরকার চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জসমূহ বিবেচনায় নিয়ে অধিকতর ফলাফলভিত্তিক একটি প্রশিক্ষণ প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার পাশাপাশি শিল্প খাতে নিয়োজিত জনশক্তির যুগোপযোগী দক্ষতা নিশ্চিত করা যায়। এভাবেই অর্থমন্ত্রী বাজেটে কথাগুলো বলেছেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণে অর্থায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত ‘জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিল’-এর কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু করার জন্য স্থায়ী জনবল নিয়োগ শুরু হয়েছে। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এনএসডি) জাতীয় দক্ষতা পোর্টাল বিনির্মাণ ও জাতীয় দক্ষতা নীতি প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের কাজে হাত দিয়েছে।