গ্রাম থেকে শহরে এসেই শতক হাঁকায় ডাব

রাজধানীর সদরঘাট এলাকায় শনিবার ইফতারের আগে আনসার আলী তাঁর ভ্যানে থাকা প্রতিটি ডাবের দাম হাঁকেন ১০০ টাকা। এ সময় তাঁকে ঘিরে ছিল প্রায় ১০ জন ক্রেতা। বিক্রেতার প্রতি ক্রেতাদের একটাই অনুরোধ, দাম একটু কম রাখেন। কিন্তু আনসার আলী অনড়। তাঁর জবাব ‘একদাম এক শ’। কথা বলারই যেন ফুরসত নেই।

আরও পড়ুন

এর মধ্যেই আনসার আলীর কাছে জানতে চাইলাম, দাম এত বেশি কেন। কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে তিনি জানালেন, ‘একটু আগেও ১১০-১২০ টাকায় প্রতিটি ডাব বিক্রি হয়েছে। এখন ইফতারের সময় এ জন্য দাম একটু কম, ১০০ টাকা। তাঁর মতে, ইফতারের সময় দামে কিছুটা ছাড় দিচ্ছেন।

গরম বাড়ার পাশাপাশি রোজা শুরুর পর থেকে বেড়েছে ডাবের চাহিদা। তাই দামও বাড়তি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আকারভেদে প্রতিটি ডাব বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১২০ টাকায়।

শুধু সদরঘাট নয়, রাজধানীর বেশ কয়েকটা এলাকা ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরম বাড়ার পাশাপাশি রোজা শুরুর পর থেকে বেড়েছে ডাবের চাহিদা। তাই দামও বাড়তি। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আকারভেদে প্রতিটি ডাব বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১২০ টাকায়।

রোজার মাস বলে এখন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ডাবের বিক্রি কম। দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডাবের বিক্রি থাকে বেশ রমরমা।

রোজার মাস বলে এখন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ডাবের বিক্রি কম। দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডাবের বিক্রি থাকে বেশ রমরমা। রাজধানীর মগবাজার এলাকায় ঘুরে ঘুরে ডাব বিক্রি করেন আশরাফুল ইসলাম। কারওয়ান বাজার থেকে এসব ডাব কিনে এনে তিনি মগবাজারের গলিতে গলিতে ঘুরে তা বিক্রি করেন। ইফতারের আগেই এসব ডাব বিক্রি শেষ করেন। গত শুক্রবার কথা হয় তাঁর সঙ্গে। জানতে চাইলাম ডাবের দাম কেমন? প্রশ্ন শুনেই আশরাফুলের চটজলদি উত্তর, ‘ছোট আকারের যে ডাব আগে ৩৫-৩৬ টাকায় কিনতাম, তা এখন ৪৮ টাকা। তীব্র গরমে ডাবের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ করে দামও বেড়ে গেছে।’

রমজানের শুরুতেও ডাবের দাম সহনীয় ছিল। হঠাৎ করে অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে ডাবেরও দাম বেড়ে গেল। তাতে আমাদের সব খরচ বাদ দিয়ে কিছুটা লাভের দেখা পেতে হলে ৮০ টাকায় একেকটি ডাব বিক্রি করতে হয়।
আশরাফুল ইসলাম, মগবাজার এলাকার ডাব বিক্রেতা

চৈত্রের তীব্র দাবদাহের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রোজার মাস। তাতে চাহিদা একটু বাড়তি আর সেটিকেই পাইকারেরা সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে বলে জানান খুচরা বিক্রেতা আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রমজানের শুরুতেও ডাবের দাম সহনীয় ছিল। হঠাৎ করে অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে ডাবেরও দাম বেড়ে গেল। তাতে আমাদের সব খরচ বাদ দিয়ে কিছুটা লাভের দেখা পেতে হলে ৮০ টাকায় একেকটি ডাব বিক্রি করতে হয়।’
কারওয়ান বাজারের ডাবের পাইকারি ব্যবসায়ী রকি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক মো. সাগর হোসেন বলেন, ‘এবার চাহিদার তুলনায় আড়তে ডাব আসছে কম। এ কারণে দাম বেশি। আগে যে ডাব ৬০ টাকা বিক্রি করতাম, এখন সেটি বিক্রি করতে হচ্ছে ৭৫ টাকায়।’

ফাইল ছবি
ঢাকার পাইকারি বাজারে ডাবের মূল জোগান আসে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর থেকে। এসব জেলার পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডাব ব্যবসাকে কেন্দ্রে স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠেছে আড়তদারি ব্যবসা।

একাধিক পাইকারি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার পাইকারি বাজারে ডাবের মূল জোগান আসে লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর থেকে। এসব জেলার পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডাব ব্যবসাকে কেন্দ্রে স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠেছে আড়তদারি ব্যবসা। স্থানীয় পর্যায়ের এসব আড়ত থেকে নিলামে ডাব কিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়।

আরও পড়ুন

আমাদের বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটে বর্তমানে গাছে থাকা প্রতিটি ডাব আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। এক মাস আগেও এ দাম ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের সারোয়ার শেখ গত ১০ বছর ধরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গাছ থেকে ডাব কিনে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরম বেশি পড়লে ডাবের দামও একটু বেশি রাখেন কৃষকেরা। স্থানীয় বাজারে আমরা এখন বড় আকারের প্রতিটি ডাব বিক্রি করছি ৫০-৬০ টাকায়।

আরও পড়ুন

আমাদের লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি কথা বলেন সেখানকার ডাব ব্যবসায়ী শাহ আলমের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে সব জিনিসের দাম যেহেতু বেশি তাই ডাবের দামও বেড়েছে। সবশেষ ঢাকায় মাঝারি আকারের প্রতিটি ডাব পাঠিয়েছি ৪৮ টাকা দরে। দুই সপ্তাহ আগেও এ ধরনের ডাবের দাম ছিল ৪০ টাকার কম।