জটিলতা কমালে বাণিজ্য বাড়বে
বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি বাড়াতে পণ্যবাহী কার্গো বিমানসেবা চালুর সুবিধা চান সেই দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি তাঁরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব সেবা ডিজিটালাইজড করা ও এক জায়গায় আনার কথা বলেন।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৫ কোটি মার্কিন ডলার বা ৪০০ কোটি টাকার প্রক্রিয়াজাত মাছ ও নানা ধরনের শাকসবজি আমদানি করে সিমার্ক গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ইকবাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরাসরি কার্গো বিমানের ফ্লাইট চালু করা হলে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি আরও বাড়বে। এতে অন্যরাও বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে আগ্রহী হবেন।’
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইকবাল আহমেদ আরও জানান, তিনি দেশ থেকে আম আমদানিতে বেশ আগ্রহী। কিন্তু এ জন্য যেসব সুবিধা দরকার, সেগুলোতে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে।
তাঁর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয় যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার শহরের সেন্ট্রাল কনভেনশন কমপ্লেক্সে, যেখানে গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হয়েছে বিনিয়োগ সম্মেলন। ‘বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক এ সম্মেলন যৌথভাবে আয়োজন করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ দূতাবাস। বিএসইসির ধারাবাহিক রোডশো বা বিনিয়োগ সম্মেলনের অংশ হিসেবে সম্মেলনটি আয়োজন করা হয়। এর আগে ৪ নভেম্বর লন্ডনে প্রথম সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ীদের দেশে বিনিয়োগ করলে বিশেষ সুবিধা প্রদানের ঘোষণা দেন।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী গতকাল ম্যানচেস্টারের সম্মেলনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরেন। তিনি শোনান গত এক যুগে অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার গল্প।
তাই ইকবাল আহমেদের কাছে প্রশ্ন ছিল, বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়ন কি আদৌ ঘটেছে? জবাবে তিনি বলেন, বিনিয়োগ পরিবেশের অনেক উন্নতি হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু এখনো সরকারি অনেক সেবা পেতে প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিষ্ঠানে ঘুরতে হয়। যদি বিনিয়োগ ও ব্যবসা–সংশ্লিষ্ট সব সেবা এক জায়গায় অনলাইন ব্যবস্থার আওতায় আনা যায়, তাহলে বিনিয়োগ আরও দ্রুত বাড়বে।
ম্যানচেস্টারে ব্যবসারত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরেক ব্যবসায়ী আমিন বাবর চৌধুরী বলেন, একটা সময় ছিল যখন যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মাতৃভূমির টানে বিনিয়োগে আগ্রহী হতেন। কিন্তু এখন নতুন প্রজন্ম তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ নেই। এ প্রজন্মকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে হলে সব ধরনের বিনিয়োগ সেবা সহজ ও অনলাইনভিত্তিক করতে হবে। তরুণ বিনিয়োগকারীদের কথা মাথায় রেখেই বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করা দরকার।
এদিকে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ম্যানচেস্টার শহরের মেয়র অ্যান্ড্রু বার্নহাম বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। এখন সময় বড় ধরনের বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা। এ সময় তিনি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্র্যাকের নাম উল্লেখ করে বলেন, এ ধরনের বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান যেখানে রয়েছে, সেখানে বিনিয়োগের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।
বিনিয়োগ সম্মেলনের জন্য যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারকে বেছে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে আয়োজকেরা জানান, এ শহরটি ছিল একসময় শিল্প ও বাণিজ্যসমৃদ্ধ। অনলাইন থেকে জানা যায়, বিশ্বের প্রথম শিল্পবিপ্লবের শহর ছিল ম্যানচেস্টার। ২০০৬ সালে এক জরিপে ম্যানচেস্টার শহরটি ব্যবসার জন্য যুক্তরাজ্যের মধ্যে অন্যতম পছন্দের স্বীকৃতি পেয়েছে। বস্ত্রকল ও সুতা তৈরির জন্য একসময় বেশ খ্যাতি ছিল শহরটির। এ জন্য উনিশ শতকের শুরুতে এ শহরকে কটনোপোলিশ নামেও ডাকা হতো।
গতকালের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়াগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বর্তমান বাংলাদেশের গল্পটি বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশের গল্প। এখন পরবর্তী ধাপে যেতে হলে দরকার বিনিয়োগ। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে তাই সরকার বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশ। সে জন্য দরকার বিনিয়োগ। আমাদের এখন বড় বড় শিল্পের দিকে যেতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন টেকনোলজি বা কারিগরি সহায়তা। বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে সেই সহায়তা পাওয়া সহজ।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিকর্ণ কুমার ঘোষ, বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পরে কর্ম অধিবেশনে বিনিয়োগের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন ফরেন চেম্বারের সভাপতি রূপালী চৌধুরী, সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান প্রমুখ।