জুনে খরচ করতে হবে ৮৭ হাজার কোটি টাকা
উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে গুণগত পরিবর্তন আনতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও সুফল মিলছে না। বাস্তবায়ন গতানুগতিক ধারায়।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ হবে ৩০ জুন। এই সময়ে শতভাগ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারকে খরচ করতে হবে ৮৭ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে চলতি মাসে প্রতিদিন খরচ করতে হবে ২ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা।
গত বছরের জুলাই থেকে শুরু হওয়া এ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৫৮ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে এডিপিতে আশানুরূপ টাকা খরচ হবে না, বছরের শেষ মাসে টাকা খরচের হিড়িক পড়বে, এডিপি বাস্তবায়নে এটাই যেন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এ কারণে উন্নয়ন প্রকল্পে গুণগত মান নিশ্চিত করা যায় না বলে বরাবরই অর্থনীতিবিদেরা অভিযোগ করে আসছেন। তাঁদের পরামর্শ প্রকল্পের কাজে গুণগত মান নিশ্চিত করতে বছরের শুরু থেকে কাজ করার। কিন্তু বছর যায়, পাল্টায় না কাজের ধরন।
এডিপি বাস্তবায়নে একটা প্রথা হয়ে গেছে যে অর্থবছরের ১০ মাসে আশানুরূপ টাকা খরচ হবে না। আর শেষ মাসে টাকা খরচের হিড়িক পড়বে। এখান থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বাস্তবায়নকারী সংস্থাকেই মূল ভূমিকা রাখতে হবে।আবুল মনসুর মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ সাবেক সচিব, আইএমইডি
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে এডিপিতে মোট খরচ হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা বা মোট এডিপির ৫৮ শতাংশ। গত বছর একই সময়ে বাস্তবায়নের হার একই ছিল। কিন্তু এর আগের টানা তিন অর্থবছর এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল গড়ে ৬৫ শতাংশের ওপরে।
অবশ্য গত দুই বছর এডিপি বাস্তবায়ন কম হওয়ার পেছনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা। তাঁরা বলছেন, পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল লিংক সেতু, মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্পেও করোনার প্রভাব পড়েছে। এ সময়ে সরকারের আয় কমে যাওয়ায় প্রকল্পের টাকা পেতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে আইএমইডির সাবেক সচিব আবুল মনসুর মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, এডিপি বাস্তবায়নে একটা প্রথা হয়ে গেছে যে অর্থবছরের ১০ মাসে আশানুরূপ টাকা খরচ হবে না। আর শেষ মাসে টাকা খরচের হিড়িক পড়বে। এখান থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বাস্তবায়নকারী সংস্থাকেই মূল ভূমিকা রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতি মাসে প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কমিটিতে (পিএমসি) সমস্যার কথা তুলে ধরে সেখানেই সমাধান করতে হবে।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এডিপির টাকা খরচে সবচেয়ে হতাশার চিত্র দেখা গেছে বহুল আলোচিত ও সমালোচিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। সংশোধিত এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতে ১১ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। ১১ মাসে খরচ হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা বা ৩১ শতাংশ। শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করতে হলে এ মন্ত্রণালয়কে এক মাসে খরচ করতে হবে ৮ হাজার ২২৯ কোটি টাকা।
অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সার্জিক্যাল মাস্ক কিনতে ২৫ কোটি টাকা চেয়েও পাননি বলে অভিযোগ তুলেছেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ। গত বুধবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত এক অনলাইন সভায় তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সবার সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে টাকার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হলেও খালি হাতে ফেরত আসতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ব্র্যাক ইতিমধ্যে বিনা পয়সায় ৭ কোটি ৭০ লাখ সার্জিক্যাল মাস্ক বিতরণ করেছে। এ কাজে আরও সাড়ে পাঁচ কোটি সার্জিক্যাল মাস্ক প্রয়োজন, যা তৈরিতে খরচ পড়বে ২৫ কোটি টাকা। এ টাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চাওয়া হলেও পাওয়া যায়নি। নিরুপায় হয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের দ্বারস্থ হতে হয়েছে।
আইএমইডির তথ্য বলছে, ১১ মাসে মোট বরাদ্দের অর্ধেক টাকাও খরচ করতে পারেনি, এমন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি হলো ডাক ও টেলিযোগাযোগ। ১ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে এ মন্ত্রণালয় খরচ করেছে ৫৫২ কোটি টাকা বা ৩৬ শতাংশ।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়নের হার ৪২ শতাংশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়নের হার ৪৩ শতাংশ। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ৩৩ শতাংশ।