বড় কোম্পানির ভ্যাট
দশে মিলে দিল ভ্যাট মোট আদায়ের ৪০%
বিদায়ী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ২৪,৯১১ কোটি টাকা ভ্যাট দিয়েছে বিএটিবি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে গ্রামীণফোন ও রবি।
দেশের মাত্র ১০টি কোম্পানি ৩৮ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট দিয়েছে। ওই ১০টি কোম্পানিই দেশের শীর্ষ ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান। এই তালিকায় শীর্ষে আছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ (বিএটিবি)। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন ও রবি।
যদিও ভ্যাট দেয় ভোক্তা। বিভিন্ন কোম্পানি ভোক্তার কাছ থেকে সেই ভ্যাট সংগ্রহ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দেয়। বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে যত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আদায় হয়েছে, তার প্রায় ৪০ শতাংশই দিয়েছে শীর্ষ ১০টি কোম্পানি। বিদায়ী অর্থবছরে ৯৭ হাজার ৫০৯ কোটি টাকার ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আদায় হয়েছে। ভ্যাট দেওয়ায় শীর্ষ ১০ কোম্পানির সব কটি ভ্যাটের বৃহৎ করদাতা ইউনিটে (এলটিইউ) নিবন্ধিত। এসব কোম্পানি সব মিলিয়ে ৩৮ হাজার ১১১ কোটি টাকা ভ্যাট দিয়েছে, যা এলটিইউর মোট শুল্ক-কর আদায়ের ৭৭ শতাংশের বেশি।
কারা কত দিল
বরাবরের মতো সিগারেট প্রস্তুতকারক কোম্পানি বিএটিবি ভ্যাট দেওয়ায় শীর্ষে। কোম্পানিটি গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ২৪ হাজার ৯১১ কোটি টাকা দিয়েছে, যা আগেরবারের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি।
করোনায় মোবাইল ফোনে কথা বলা বেড়েছে। আবার ভিডিও কল, অনলাইন ক্লাস, জুম মিটিংসহ দৈনন্দিন নানা কাজে এখন মোবাইল ফোন ব্যবহার হচ্ছে বেশি। ফলে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আগের চেয়ে ভ্যাট আদায় বেড়েছে। ভ্যাটদাতা শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির মধ্যে তিনটিই মোবাইল ফোন অপারেটর। এর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে আছে গ্রামীণফোন। এই কোম্পানি গত অর্থবছরে ৪ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা ভ্যাট দিয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি।
এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) ইয়েন্স বেকার প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ বছরে গ্রামীণফোন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজস্ব প্রদানসহ যাবতীয় কাজে পাশে থাকবে গ্রামীণফোন।
করোনার সময়ে মোবাইল ফোনের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে ভ্যাটদাতা হিসেবে চতুর্থ স্থান থেকে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে আরেক মোবাইল অপারেটর রবি। এই কোম্পানি আগেরবারের চেয়ে প্রায় ৪৮ শতাংশ বেশি ভ্যাট দিয়েছে। রবি সব মিলিয়ে দিয়েছে ২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। চতুর্থ স্থানে থাকা ইউনাইটেড ঢাকা টোব্যাকো গতবারের চেয়ে ২৬ শতাংশ কম ভ্যাট দিয়েছে। কোম্পানিটি মোট ভ্যাট দিয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার মতো। পঞ্চম স্থানে আবারও মোবাইল ফোন কোম্পানি, বাংলালিংক দিয়েছে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আগের চেয়ে প্রায় ৩১ শতাংশ বেশি ভ্যাট পরিশোধ করেছে এই কোম্পানি।
এরপর ষষ্ঠ স্থানে থাকা ইউনিলিভার ৬৫৫ কোটি টাকা, সপ্তম স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ৫৭৯ কোটি টাকা, অষ্টম পেট্রোবাংলা ৫৭৮ কোটি টাকা, নবম পিডিবি ৫৪০ কোটি টাকা এবং দশম স্কয়ার ফার্মা ৫১০ কোটি টাকা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলটিইউর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, করোনার বছরে সার্বিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে
মন্দা থাকলেও কর্মকর্তারা তদারকি বাড়িয়েছেন। এ জন্য শুল্ক-কর আদায় আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে। বড় কোম্পানিগুলোর ব্যবসাও তুলনামূলক ভালো ছিল।
দেশের বড় কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের এলটিইউ। এলটিইউতে ১১০টি কোম্পানি নিবন্ধিত। বিদায়ী অর্থবছরে মোট ৯৭ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা আদায় করেছে ভ্যাট বিভাগ। এর মধ্যে এলটিইউর ওই ১১০টি কোম্পানিই অর্ধেকের বেশি ভ্যাট দিয়েছে। তাদের দেওয়া ভ্যাটের পরিমাণ ৪৯ হাজার ২৫২ কোটি টাকা।
খাতওয়ারি হিসাবে করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আদায় হয়েছে সিগারেট, মোবাইল ফোন ও ওষুধ খাত থেকে। সার্বিকভাবে সিগারেট খাত থেকে সবচেয়ে বেশি প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা, মোবাইল ফোন খাতে ৮ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা এবং ওষুধ খাত থেকে এসেছে ৩ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা।
এলটিইউতে ভ্যাট দেওয়ার প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ব্যাংক, সাবান ও কোমল পানীয়র ব্যবসা করোনার সময়ে ভালো ছিল। ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের সেবার বিপরীতে ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও আবগারি শুল্ক কাটে। সেই হিসাবে গতবার ব্যাংক খাতে ভ্যাট দেওয়ায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে সবচেয়ে বেশি, ৪৩ শতাংশ। ব্যাংক খাত থেকে ভ্যাট পাওয়া গেছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। ভ্যাট প্রদানে কোমল পানীয় খাতে প্রবৃদ্ধি ৩৯ শতাংশ এবং সাবানে ৩৫ শতাংশ।