বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম বলে দাবি করেছে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব। সংগঠনটি যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান কেব্লের হিসাব তুলে ধরে জানিয়েছে, মোবাইল ইন্টারনেটের দামের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৮তম। এ দেশে প্রতি গিগাবাইট ইন্টারনেট প্যাকেজের গড় দাম ২৯ টাকার মতো।
আজ বৃহস্পতিবার এক ভার্চ্যুয়াল মতবিনিময় সভায় অ্যামটবের মহাসচিব এস এম ফরহাদের তুলে ধরা উপস্থাপনায় এ কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে মোবাইল সেবার ওপর করহার অনেক বেশি। আর ইন্টারনেট সেবার মান শুধু মোবাইল অপারেটরদের ওপর নির্ভর করে না।
বিশ্বের নানা দেশের ইন্টারনেটের গড় গতির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা প্রতিষ্ঠান ওকলার হিসাবে গতির দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯টি দেশের মধ্যে ১৩৫তম। সাম্প্রতিককালে বিষয়টি নিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। আবার কম মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজের ডেটা নতুন প্যাকেজ কিনলে তাতে যুক্ত হয় না কেন, তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
এর মধ্যেই আজ তিনটি মোবাইল অপারেটরের প্রতিনিধিকে নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে অ্যামটব। এতে উপস্থাপনায় এস এম ফরহাদ বলেন, বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাত আরও এগিয়ে যেত যদি করকাঠামো খাতের জন্য সুবিধাজনক হতো। তিনি জানান, এ দেশে মোবাইল অপারেটরের ওপর ন্যূনতম কর ২ শতাংশ, যা তামাক কোম্পানির ওপর ১ শতাংশ। অন্যদের ওপর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।
বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটরদের ওপর করপোরেট কর ৪৫ শতাংশ, যা পাকিস্তানে ৩০, শ্রীলঙ্কায় ২৮, ভারতে ২২ ও আফগানিস্তানে ২০ শতাংশ—যোগ করেন অ্যামটব মহাসচিব। তিনি আরও তুলে ধরেন, মোবাইল সেবা গ্রহীতার ওপর মোট করভার বাংলাদেশে ৩৩, শ্রীলঙ্কায় ২৩, পাকিস্তানে ১৭ ও ভারতে ১৫ শতাংশ। উল্লেখ্য, মোবাইল ইন্টারনেটের ওপর করভার বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় সাধারণ সেবার চেয়ে কিছুটা কম। বাংলাদেশে ২২ ও শ্রীলঙ্কায় ১০ শতাংশ।
ইন্টারনেটে গতি নিয়ে এস এম ফরহাদ বলেন, কাছাকাছি ধরনের জনঘনত্বের দেশগুলো ওকলার তালিকায় কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান যেমন ১৩৫তম, তেমনি পাকিস্তান ১১৪, ভারত ১২২, শ্রীলঙ্কা ১২৯ ও আফগানিস্তান ১৩৭তম অবস্থানে রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশে জনঘনত্ব সবচেয়ে বেশি।
ইন্টারনেট গতির দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯টি দেশের মধ্যে ১৩৫তম। সাম্প্রতিককালে বিষয়টি নিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।
অ্যামটবের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে শহরগুলোতে ভবনের ঘনত্ব অনেক বেশি। ভবনের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা অনেক কম। এ রকম পরিস্থিতিতে সব জায়গায় উন্নত নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করা কঠিন। বাংলাদেশে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের বিপরীতে গ্রাহকসংখ্যা অনেক বেশি। এ দেশে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা ব্যবস্থায় অপারেটররা একটি অংশমাত্র। এ ব্যবস্থায় আরও অনেক প্রতিষ্ঠান যুক্ত। তাদের উন্নত সেবার ওপর ইন্টারনেটে উন্নত সেবা অনেকাংশে নির্ভর করে।
ডেটা প্যাকেজের বিষয়ে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, বিটিআরসির নিয়ম মেনে একই প্যাকেজে অব্যবহৃত ডেটা সব সময় ফেরত দেওয়া হয়।
গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হোসেন সাদাত বলেন, মোবাইল সেবার মান আইআইজি, আইসিএক্স, আইজিডব্লিউ, টাওয়ার পরিচালনা ও ফাইবার কেব্ল নেটওয়ার্কের ওপরও নির্ভর করে। এ ক্ষেত্রে দেশে আলাদা লাইসেন্স দেওয়া হয়। অপারেটরদের এসব লাইসেন্স দেওয়া হলে সেবার মান আরও উন্নত হতো।
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, তরঙ্গের চড়া দাম ও অন্যান্য বিষয়ে বিটিআরসির সঙ্গে সব সময় কাজ করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে অ্যামটবের পক্ষ থেকে উন্নত সেবা দিতে ব্যবসার ভালো পরিবেশ, যৌক্তিক করকাঠামো, লাইসেন্স নীতিমালায় সংস্কার, আইন ও নীতি সংস্কার এবং স্বল্পমূল্যে তরঙ্গ বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়।