পিআরআইয়ের সেমিনার
মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে হবে
বক্তারা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার টেকসই করতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে বলেন। তাঁরা অমিক্রন ঠেকাতে বিধিনিষেধ না দিয়ে টিকা কার্যক্রম জোরদারের পরামর্শ দেন।
দেশে করোনার নতুন ধরন অমিক্রন ছড়িয়ে পড়ছে। অর্থনীতিতে ভর্তুকির চাপ আছে, প্রণোদনার অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। এর ওপর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ হচ্ছে না। তাই করোনার ক্ষত কাটিয়ে অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের যে ধারা শুরু হয়েছিল, সেটি টেকসই হওয়া নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার টেকসই করতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ‘করোনার থাবা কাটিয়ে শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের পথে অর্থনীতি’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা অমিক্রণের সংক্রমণ ঠেকাতে নতুন করে বিধিনিষেধ না দেওয়া এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার পরামর্শও দেন। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা খাতের উন্নতি ও টিকা কার্যক্রম জোরদার করতে বলেন তাঁরা।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে বেকারদের কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সে ব্যাপারে আলাদা পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এ জন্য সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা দিন। নিজেদের জন্যই কেবল চাইবেন না।
অনুষ্ঠানে পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার বলেন, করোনার ধকল কাটিয়ে দেশের অর্থনীতিতে এখন শক্তিশালী পুনরুদ্ধার চলছে। করোনাকালে সরকার সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ায় ও নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখায় এমন সাফল্য এসেছে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, পুনরুদ্ধার টেকসই করতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। সহজ ব্যবসা করার পরিবেশ নিশ্চিত করার যে প্রতিশ্রুতি, তার সঙ্গে বাস্তবায়নের মিলও রাখতে হবে। মূল্যম্ফীতির লাগাম টানতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে আরও বেশি সহায়তা দিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে তদারকি ও জবাবদিহি।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বিদিশা বলেন, কৃষি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো চাপ তৈরি করা যাবে না। কারণ, করোনার মধ্যে কৃষিই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। করোনায় যাঁরা পেশা পরিবর্তন করেছেন, তাঁদের সহায়তা দিতে হবে। বৈষম্য যেভাবে বাড়ছে, তা কমিয়ে আনতে বাজেটীয় কর্মসূচি থাকা প্রয়োজন। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতেও উদ্যোগ দরকার।
পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশের লেনদেনের ভারসাম্যে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে। ২০১৩ সালেও এ রকম হয়েছিল। তখন চাপ সামলাতে দ্রুত টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছিল। এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধীরে চলছে। পুরো বছরে ডলারের দাম মাত্র ১ টাকা বেড়েছে। দ্রুত এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।
আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, ‘আমরা সব প্রকল্প করছি ঋণের টাকায়, তা দেশীয় হোক আর বিদেশি হোক। এটা কোনোভাবেই ভালো কিছু না। মূল্যস্ফীতি নিয়ে একটা বড় চাপ তৈরি হবে। কারণ, ডলার ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সঙ্গে এর সম্পর্ক আছে।’
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ছোট ও মাঝারি আকারের কারখানাগুলো এখনো সংকটে আছে। কাঁচামালের দাম বাড়ছেই। তারপরও বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। সংকট সমাধান ও রপ্তানি আরও বাড়াতে সমন্বিত রূপরেখা প্রয়োজন।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘কর আদায় ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং রপ্তানি পণ্য বৈচিত্র্যকরণ ও সহজে ব্যবসা করার বিষয়ে যেসব সংস্কার প্রয়োজন, তার গতি জোরদার করতে হবে।’
বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, রপ্তানি আদেশ বাড়ায় প্রতিটি কারখানায় এখন ১০-১৫ শতাংশ শ্রমিক সংকট তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মঞ্জুর হোসেন বলেন, প্রণোদনার ঋণ ফেরত না এলে ব্যাংকিং খাত বিপদে পড়বে। এতে পুনরুদ্ধার টেকসই হবে না।
অনুষ্ঠানে সাংসদ ওয়াসেকা আয়শা খান, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।