শহরের সঙ্গে গ্রামেও বেড়েছে মূল্যস্ফীতি

মূলত ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বাড়ানোর পর থেকে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। সেটাকে আরও উসকে দেয় রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে রাখার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। কিন্তু সেই লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেছে মূল্যস্ফীতি। গত ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৬ শতাংশ অতিক্রম করেছে। অর্থবছরের বাকি চার মাসে মূল্যস্ফীতি সরকারি লক্ষ্যমাত্রায় নামিয়ে আনা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংশয় বাড়িয়ে দিয়েছে। যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ফলে আমদানি অনেক পণ্যের দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে পরিবহন ব্যয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে দেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১৭। এর মানে হলো, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে যে পণ্য ১০০ টাকায় মিলত, সেটি এখন ১০৬ টাকা ১৭ পয়সায় কিনতে হচ্ছে মানুষকে। জানুয়ারিতে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৬ দশমিক ২২ হয়েছে, যা আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। অবশ্য খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ১০-এ নেমেছে, যেটা জানুয়ারিতে ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ ছিল।

মূলত ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বাড়ানোর পর থেকে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। সেটাকে আরও উসকে দেয় রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, দেশে এখন সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। তাই তাঁরা নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন।

চাল, ডাল, আটা, তেল, মাছসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতির কথা এত দিন বিভিন্ন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বলে আসছিল। এবার সরকারি সংস্থা বিবিএসের প্রতিবেদনেই মূল্যস্ফীতি লাগাম ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এল।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি জানান, দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার সয়াবিন তেল আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে, এক কোটি পরিবারের মধ্যে সুলভ মূল্যে পণ্য বিতরণ করছে।

বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে গ্রামাঞ্চলে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশে ঠেকেছে, যা জানুয়ারিতে ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ হয়েছে, যা আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তবে ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ হয়েছে, যা আগের মাসে ছিল ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ।

শহরেও মূল্যস্ফীতির একই চিত্র। ফেব্রুয়ারিতে শহরাঞ্চলে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ হয়েছে, যা জানুয়ারিতে ছিল ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ হয়েছে, যা জানুয়ারিতে ছিল ৪ দশমিক ৮৫ ভাগ। অবশ্য খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমে ৫ দশমিক ৯১ শতাংশে নেমেছে, যা জানুয়ারিতে ছিল ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ।