সাড়ে চার বছর পর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, তবে বয়সে আইনের ব্যত্যয়

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নন-লাইফ সদস্য নেই সাড়ে চার বছর। কোনো লাইফ সদস্যও নেই এক বছরের বেশি সময় ধরে। এত দিন পরে এসে হুঁশ হলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের। তারা আইডিআরএতে দুজন সদস্য নিয়োগ দিতে ২২ নভেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। কিন্তু আগ্রহী ব্যক্তিদের বয়সের বিষয়টি বিজ্ঞপ্তিতে বিদ্যমান বিমা আইন পুরোপুরি মানা হয়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে আবেদনকারীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা চলতি ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬০ বছর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সদস্য (লাইফ) ও সদস্য (নন-লাইফ) পদে তিন বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেবে সরকার। বিমা, ফিন্যান্স, ব্যাংকিং, মার্কেটিং, পরিসংখ্যান, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায় প্রশাসন বা আইন বিষয়ে অধ্যয়নসহ বিমা খাতে কমপক্ষে ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

বিদ্যমান আইনে বয়স ৬৭ বছর হওয়া পর্যন্ত আইডিআরএর সদস্যপদে থাকা যায়। সে অনুযায়ী ৬১ থেকে ৬৪ বছর বয়সী যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরাও আইডিআরএর লাইফ ও নন-লাইফ সদস্য পদের জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সেই সুযোগ কেন রাখা হয়নি, তা নিয়ে আজ সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রশ্ন করা হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই বেশি বয়স্কদের তুলনায় কম বয়স্করা আইডিআরএর সদস্য হিসেবে দায়িত্বে আসুক। তাহলে তাঁরা নতুন উদ্যমে কাজ করতে পারবেন। বিজ্ঞপ্তির শর্তের মধ্যে এ বিষয় বিবেচনায় রাখা হয়েছে।’

তবে এত লম্বা সময় পদ দুটি ফাঁকা রাখা হলো কেন-এই প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে চাননি শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ।

বিজ্ঞপ্তিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের সম্প্রতি তোলা তিন কপি পাসপোর্ট আকারের ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদ, পরীক্ষার মার্কশিট বা গ্রেড পয়েন্টের সত্যায়িত কপি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের সত্যায়িত কপিসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদনের শেষ সময়সীমা আগামী ২৬ ডিসেম্বর।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১০-এর ৭ ধারার ৩ (ছ) উপধারায় বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান ও সদস্যপদে থাকা কোনো ব্যক্তির বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হলে তিনি ওই পদে নিযুক্ত হওয়ার বা থাকার যোগ্য হবেন না। আইনের ৬ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধান সাপেক্ষে, চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ কার্যভার গ্রহণের তারিখ হতে ৩ বৎসর মেয়াদে স্বীয় পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন এবং অনুরূপ একটি মাত্র মেয়াদের জন্য পুনরায় নিয়োগের যোগ্য হবেন।’

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে আইন পুরোপুরি অনুসরণ করা হলে আইডিআরএর সদস্য হতে আগ্রহী প্রার্থীদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা হওয়ার কথা ৬৪ বছর। কিন্তু বিজ্ঞপ্তিতে বয়সসীমা কমিয়ে ৬০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে, যেটাকে বিমা আইনের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক বলে মনে করা হচ্ছে।

খাতসংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন, বর্তমান বিজ্ঞপ্তি বহাল থাকলে অনেক যোগ্য ব্যক্তিই আবেদন করার সুযোগ পাবেন না। যেমন আইডিআরএর সদস্য হওয়ার মতো সব যোগ্যতা আছে, কিন্তু বয়স ২ মাস বেশি (৬০ বছর ২ মাস) বেশি হওয়ায় আবেদন করতে পারছেন না, এমন একজন প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এ বিজ্ঞপ্তি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হয় গোঁয়ার্তুমি, নয় অজ্ঞানতা অথবা কারও কারও প্রতি পক্ষপাতিত্বপূর্ণ আচরণের শামিল। সাড়ে চার বছর গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ না নেওয়াটাও বিভাগটির দায়িত্বহীনতা। তবে ভালো দিক যে বিভাগ নিজে নিজে নিয়োগ না দিয়ে এবার অন্তত বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে আইডিআরএ। এর সদস্য (নন-লাইফ) পদে সর্বশেষ দায়িত্ব পালন করেন জুবের আহমেদ খাঁন। ২০১৪ সালের ৪ মার্চ থেকে ২০১৭ সালের ৩ মার্চ পর্যন্ত তিনি এ পদে ছিলেন। এর পর কাউকেই এ পদে নিয়োগ দেয়নি সরকার।

আর সদস্যপদে (লাইফ) সবশেষ দায়িত্ব পালন করেছেন আইডিআরএর বর্তমান চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন। ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি আইডিআরএর চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান। এর পর থেকে এ পদও শূন্য রয়েছে।
চেয়ারম্যানের পাশাপাশি আইডিআরএর মোট সদস্য থাকার কথা চারজন। এর মধ্যে একজন আইনসংক্রান্ত বিষয় ও অন্যরা প্রশাসনের দায়িত্বে। আইনসংক্রান্ত বিষয় দেখার জন্য সাধারণত সাবেক কোনো জেলা জজকে বেছে নেওয়া হয়। আর প্রশাসন দেখার জন্য নিয়োগ পেয়ে আসছেন সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিবেরা।

যোগাযোগ করলে আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নন-লাইফ ও লাইফ সদস্য দুজন আরও আগেই দরকার ছিল। সরকার এবার সদস্য নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বলে ভালো লাগছে।’

৬০ বছর বয়স বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘হয়তো দুটি মেয়াদ মাথায় রেখে এটা করা হয়েছে। তবে বিজ্ঞপ্তিতে কিন্তু এটাও বলা রয়েছে, সরকার চাইলে যেকোনো সময় এ বিজ্ঞপ্তি বাতিল, পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারবে।’