মহামারির পর নতুন চাহিদা
১ লাখ কোটি পাউন্ড রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ব্রিটেনের
দেশটির বিপুলসংখ্যক কোম্পানির মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ রপ্তানি করে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধির পথে এটা বড় বাধা বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
২০২০ সালে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক সংকোচন হয় ৯ দশমিক ৯ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা ছিল, সংকোচন হার দুই অঙ্কের ঘর ছোঁবে। তবে শেষমেশ তা হয়নি।
একের পর এক ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়েছে ব্রিটিশ অর্থনীতি। টানা কয়েক বছরের রশি-টানাটানির পর ব্রেক্সিট যখন শেষমেশ কার্যকর হলো, তখনই শুরু হলো কোভিড মহামারি। তার জেরে গত বছর অন্যান্য বড় অর্থনীতির মতো ব্রিটিশ অর্থনীতিও সংকুচিত হয়েছে।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ভালোই করেছে ব্রিটিশ অর্থনীতি। এবার তাদের পরিকল্পনা হলো, আগামী এক দশকের মধ্যে ব্রিটেনের বার্ষিক রপ্তানি এক লাখ কোটি পাউন্ডে উন্নীত করা। মহামারির পর বাজারে সৃষ্ট নতুন চাহিদার হাত ধরে রপ্তানি আয় এতটা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে তারা।
বিবিসির খবরে জানানো হয়েছে, ২০২০ সালে ব্রিটেনের মোট রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০ হাজার কোটি পাউন্ড। কিন্তু দেশটির বিপুলসংখ্যক কোম্পানির মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ রপ্তানি করে। রপ্তানি আয় বৃদ্ধির পথে এটা বড় বাধা বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা। সে জন্য দেশটির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিন সম্প্রতি বলেছেন, কোম্পানিগুলোর রপ্তানি সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য এটা খুবই জরুরি।
রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্রিটেন ১২ দফা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই পরিকল্পনার আলোকে যুক্তরাজ্যের রপ্তানি অর্থায়ন সংস্থাসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা রপ্তানিকারকদের ব্যবসা ধরতে নানা ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো যেন নিজেদের পণ্যসম্ভার মেলে ধরতে পারে, সে লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মেলাও আয়োজন করবে। কিন্তু অভিযোগ আছে, এ ধরনের কার্যক্রম আগেও হাতে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু কখনোই তা বাস্তবায়িত হয়নি।
অন্যান্য ধনী দেশ মহামারির প্রভাব কাটিয়ে দ্রুত উঠে দাঁড়াচ্ছে। তাদের রপ্তানিও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটেন দ্রুত রপ্তানি বৃদ্ধির তাগিদ বোধ করছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, রপ্তানি বৃদ্ধির এই লক্ষ্য অত সহজে বাস্তবায়িত হবে না। ব্রিটিশ সরকার যে বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না, তা হচ্ছে ব্রেক্সিট। তাদের মনোভাব এমন, ব্রেক্সিট আবার কী। ব্যাপারটা হলো, ইউরোপের একক বাজারে ব্রিটেনের রপ্তানি করা যতটা সহজ ছিল, এখন ততটা সহজ হবে না, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও। দেশটির স্বাধীন পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান অফিস ফর বাজেট রেসপনসিবিলিটির হিসাব অনুসারে, আগামী দিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্তরাজ্যের রপ্তানি ১৫ শতাংশ কমে যাবে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করছেন, রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়।
২০২০ সালে যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক সংকোচন হয় ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবেই এর কারণ হচ্ছে কোভিডজনিত বিধিনিষেধ। দেশটির অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস (ওএনএস) তখন জানায়, প্রবৃদ্ধির হিসাবরক্ষণ শুরু হওয়ার পর এর আগে সর্বোচ্চ যে সংকোচন হয়েছিল, এটা তার দ্বিগুণের বেশি।
গত বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সংকোচন হয়েছিল যুক্তরাজ্যের। তবে বছরের শেষ দুই প্রান্তিকে সংকোচন হার কমে আসে। এমনকি ডিসেম্বর মাসে ১ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও হয়। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা ছিল, সংকোচন হার দুই অঙ্কের ঘর ছোঁবে। তবে শেষমেশ তা হয়নি।