২৭০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি

সম্মেলনে বিভিন্ন অধিবেশনে সরকারি প্রতিনিধিরা বলেন, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ আদর্শ স্থান।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)

দুই দিনের বিনিয়োগ সম্মেলনে ২৭০ কোটি ডলার বা প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার সম্মেলন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, এ বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির বেশির ভাগই সৌদি আরবের। ওষুধ ও হাসপাতাল নির্মাণে দেশটির ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন্স বড় বিনিয়োগ করছে। এ ছাড়া তুরস্ক ও চীন থেকেও কিছু প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বার্জার বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী প্রমুখ। এর আগে সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে সালমান এফ রহমান বলেন, এরই মধ্যে বিনিয়োগসংক্রান্ত কিছু সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে আরও কিছু সমঝোতা স্মারক সই হবে।

রাজধানীর র‌্যাডিসন হোটেলে দুই দিনের এ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করে বিডা। দুই দিনের এ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা নিরাপদ। করকাঠামো ও নীতিসুবিধার কারণে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য এখন আদর্শ স্থান।

যদিও এর আগে দিনের অন্য কর্ম অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিনিয়োগ ও ব্যবসার ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরা হয়। এমনকি বিদেশি বিনিয়োগ আনতে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন নীতি-কৌশল বারবার পরিবর্তন না করে ধারাবাহিকতা চেয়েছেন তাঁরা। সম্মেলনের শেষ দিনে বিভিন্ন কর্ম অধিবেশনে ব্যবসায়ীরা তাঁদের এসব চাওয়ার কথা তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন বড় বাধা। গতকাল সম্মেলনের শেষ দিনে বিষয়ভিত্তিক মোট ছয়টি কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। বিডার পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবারের সম্মেলনে ৫৪ দেশের ৬ হাজারের বেশি প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।

পোশাক ও বস্ত্র খাত নিয়ে আয়োজিত কর্ম অধিবেশনে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, নীতি-কৌশলেরও ধারাবাহিকতা জরুরি। যত দ্রুত সম্ভব মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ দেন তিনি।

ওই কর্ম অধিবেশনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, পোশাক খাতে কাস্টমস ও এনবিআর-সংক্রান্ত অনেক জটিলতা রয়েছে এখনো। এগুলো দূর করতে হবে। এনবিআরকে বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে হবে।

বিটিএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ঢাকা থেকে ভোর ছয়টায় রওনা দিয়ে গাজীপুরে যেতে সময় লাগে পাঁচ ঘণ্টা। পোশাকশিল্প খাতসংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ কারখানা গাজীপুরে অবস্থিত। তাই ব্যবসার উন্নতি ঘটাতে যানজট নিরসনে সরকারের কার্যকর হস্তক্ষেপ চান তিনি।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বস্ত্র খাতে বড় সমস্যা দক্ষ লোকের অভাব। যে কারণে এ খাতে দামি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

মার্কস অ্যান্ড স্পেনসারের এদেশীয় পরিচালক স্বপ্না ভৌমিক বলেন, বাংলাদেশে শতভাগ লেস আসে চীন থেকে। কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তাই দেশেই যাতে কাঁচামাল উৎপাদন করা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে।

ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কর্ম অধিবেশনে উপস্থিত বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সরকারের নীতি-কৌশলের ধারাবাহিকতা রক্ষার আশ্বাস দেন।

টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ শিরোনামে দিনের অন্য এক কর্ম অধিবেশনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, দেশে এখন ৪৫ বিলিয়ন বা সাড়ে ৪ হাজার কোটি ডলারের রিজার্ভ। করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। আর্থিক খাতও বেশ স্থিতিশীল রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের আদর্শ জায়গা।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ব্যবস্থাপক সেলমা রাসাভাক আর্থিক খাতের সংস্কার, এসএমই খাত ও আন্তর্জাতিক অর্থায়নের বিষয়ে বৈচিত্র্য আনার তাগিদ দেন তিনি।

ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভাপতি আলী রেজা ইফতেখার ঋণখেলাপির হার বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, খেলাপি ঋণ আর বাড়তে দেওয়া যাবে না। এটা কমাতে হবে।