দীর্ঘদিন ধরে মজুরি ও ভাতা নিয়ে সমস্যায় থাকায় গাজীপুরের স্টাইলক্র্যাফট ও ইয়ংওয়ান বিডি লিমিটেডের শ্রমিক-কর্মচারীরা অবশেষে পাওনা পেতে যাচ্ছেন। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বন্ধ থাকা কারখানা দুটি ২৫ আগস্ট খুলবে।
কারখানা খোলার দিন গাজীপুরের স্টাইলক্র্যাফট ও ইয়ংওয়ান বিডির শ্রমিক-কর্মচারীরা গত জুনের মজুরি পাবেন। এ ছাড়া কর্মচারীরা গত ডিসেম্বরের বকেয়া মজুরি এবং শ্রমিক ও কর্মচারীরা গত ঈদুল আজহার বোনাস পাবেন।
আগামী ৫ সেপ্টেম্বর কর্মচারীরা গত নভেম্বরের বকেয়া মজুরি পাবেন। শ্রমিক-কর্মচারীরা গত জুলাইয়ের মজুরি পাবেন আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। পরের মাসে অর্থাৎ ২০ অক্টোবর শ্রমিক ও কর্মচারীদের চলতি আগস্ট মাসের বেতন পাবেন। ওই দিন কর্মচারীরা গত মার্চের মাসের বকেয়া বেতন পাবেন। এভাবেই প্রতি মাসে ৫ দিন করে এগিয়ে শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়মিত করবে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
স্টাইলক্রাফট ও ইয়ংওয়ান বিডির দুটি কারখানায় ৪ হাজার ২০০ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি বাবদ বকেয়া পাওনা ১২ কোটি টাকা। বোনাসসহ অন্যান্য পাওনা ধরলে সেটি ২০ কোটি টাকার কাছাকাছি
সচিবালয়ে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মালিক-শ্রমিক-সরকার ত্রিপক্ষীয় সভায় দীর্ঘ আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত হয়। আজ বৃহস্পতিবার শ্রম মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় শ্রমসচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সাকিউন নাহার বেগম, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) মহাপরিদর্শক মো. নাসির উদ্দীন আহমেদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গৌতম কুমার, যুগ্ম সচিব (শ্রম) মোহাম্মদ নান্নু মোল্লা, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম, তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, সহসভাপতি আব্দুল মান্নান কচি, স্টাইলক্র্যাফটের পরিচালক শরীফ রহমান, গাজীপুর মহানগর জাতীয় শ্রমিক লীগ নেতা সৈয়দ আবদুল জলিল অংশ নেন। এতে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের নেতারা ছাড়াও স্টাইলক্রাফট ও ইয়ংওয়ান বিডির শ্রমিক প্রতিনিধিরা ছিলেন।
একই মালিকানাধীন স্টাইলক্র্যাফট ও ইয়ংওয়ান বিডি কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা চলছে। ঈদের আগেও বেতন–ভাতার দাবিতে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করেন। পরে গাজীপুরের মেয়র প্রত্যেক শ্রমিককে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। দুটি কারখানায় ৪ হাজার ২০০ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। স্টাইলক্রাফট ও ইয়ংওয়ানের শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি বাবদ বকেয়া পাওনা ১২ কোটি টাকা। বোনাসসহ অন্যান্য পাওনা ধরলে সেটি ২০ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যাবে।
স্টাইলক্র্যাফটের কর্মচারী নজরুল ইসলাম জানান, শ্রমিকেরা দুই মাসের মজুরি পান। আর কর্মচারীদের বেতন বকেয়া পড়েছে নয় মাসের।
জানা যায়, ঈদের পর গত ৭ আগস্ট কারখানা খোলার কথা ছিল স্টাইলক্র্যাফট ও ইয়ংওয়ান বিডি। তবে কর্তৃপক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতার অর্থ জোগাড় করতে না পারায় ২৪ আগস্ট পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কারখানা বন্ধ নোটিশে শ্রমিক-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ৮ আগস্ট বিজিএমইএর উত্তরা কার্যালয়ে সারা দিন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে বিজিএমইএর নেতারা সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে ওই দিন রাত নয়টার দিকে অবস্থান প্রত্যাহার করে ফিরে যান শ্রমিকেরা।
বিজিএমইএর কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচির পরপরই মূলত স্টাইলক্র্যাফট ও ইয়ংওয়ান বিডির শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয়টি গতি পায়। বিজিএমইএ উদ্যোগী হয়। পরে শ্রম মন্ত্রণালয়কে সামনে রেখে বিষয়টি সমাধানে যান সংগঠনের নেতারা। অবশ্য আগেও কয়েকবার বৈঠক হয়েছিল। তবে সমস্যার সমাধান হয়নি।