চামড়া কেউ ফেলে দেয়নি এবার

কয়েক বছর ধরেই কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমছে। এতে চামড়া খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই বাস্তবতায় চলতি বছর চামড়ার বাজার নিয়ে কথা বলেছেন একজন অর্থনীতিবিদ ও দুজন ব্যবসায়ী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রণব বল, শুভংকর কর্মকার আরিফুর রহমান

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এ বছর চামড়ার দামের পরিস্থিতি কেমন দেখছেন

আফতাব খান: এবার কোরবানির কাঁচা চামড়ার বাজার গত বছরের তুলনায় ভালো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে লবণযুক্ত গরুর কাঁচা চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুটে পাঁচ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্তে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতিমখানা ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সবাই চামড়ার ভালো দাম পেয়েছে। তবে দু–একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এটা আমাদের কানে এসেছে। কেউ কেউ চামড়ার ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সার্বিক বিবেচনা করলে গতবারের তুলনায় এবার চামড়ার দাম ভালো হয়েছে।

গত দুই বছর টানা চামড়ার দামে হযবরল অবস্থা ছিল। দাম না পাওয়ায় কেউ চামড়া পানিতে ফেলে দিয়েছে, কেউ মাটিতে পুঁতে ফেলেছে। কিন্তু এ বছর দেশের কোথাও চামড়া পানিতে ফেলে দেওয়া কিংবা মাটিতে পুঁতে ফেলতে দেখা যায়নি। তবে কেউ দাম কম পেয়েছে। কেউ বেশি পেয়েছে। এটা ঠিক। আমার বিশ্বাস, চামড়ার ব্যবসা আবার ঘুরে দাঁড়াবে। সামনে এ ব্যবসা আরও ভালো হবে। চামড়ার সুদিন অপেক্ষা করছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে অভিযোগ এসেছে, এ বছর ছাগলের কাঁচা চামড়ার দাম পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

আফতাব খান: এ বছর গরুর চামড়ার দাম পেলেও ছাগলের চামড়ার দাম নিয়ে মিশ্র বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। কিছু এলাকার মানুষ ছাগলের চামড়ার দাম পায়নি। অনেকে বিনা পয়সায় চামড়া রেখে গেছে। এটা ঠিক। সঠিকভাবে ছাগলের চামড়া ছাড়াতে না পারার কারণে দাম কমে যায়। ছোট একটা চামড়ার মধ্যে তিন–চারটা স্পট হয়ে গেলে দাম কমে যায়। ফলে এ অঞ্চলে ছাগলের চামড়ার দাম মেলেনি। আবার যে অঞ্চলের সঠিকভাবে চামড়া ছাড়ানো হয়েছে, সেখানে ভালো দাম মিলেছে। যেমন উত্তরবঙ্গ। চামড়া ভালো হওয়ায় অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ও ঢাকা হাইড ও স্কিন কোম্পানি প্রতিবছর উত্তরাঞ্চল থেকে ছাগলের চামড়া কিনে থাকে। তবে এটা মাথায় রাখতে হবে, আন্তর্জাতিক বাজারে ছাগলের চামড়ার দাম কমতির দিকে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনি বলছেন এ বছর চামড়ার দাম ভালো। কিন্তু মাদ্রাসা ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষ বলছে কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে বক্তব্য কী?

আফতাব খান: মাদ্রাসা ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষ কাঁচা চামড়ার দাম পায়নি বলে যে কথা হচ্ছে, তা সঠিক নয়। কোন ব্যবসায়ী ভালো, কোন ব্যবসায়ী খারাপ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষ সবকিছু জানে। তারা দীর্ঘদিন ধরেই কাঁচা চামড়া বিক্রি করে আসছে। তারা বাজার দেখেশুনে চামড়া ছাড়ে। তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। গতবারের চেয়ে তারা এবার ভালো দাম পেয়েছে। দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। হয়তো তারা কাঙ্ক্ষিত দাম পায়নি। সবচেয়ে বেশি দাম যারা দেয়, তাদের কাছেই চামড়া বিক্রি করেছে মাদ্রাসা ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষ।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়ার দাম পাননি, এটাও ঠিক নয়। তারা কোনো না কোনো ট্যানারির মালিকের সঙ্গে কথা বলেই চামড়া কিনেছে। তারা কত টাকা দিয়ে চামড়া কিনবে, সেটা নিশ্চয়ই ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছে। হয়তো দু-একজন এই প্রথম এই পেশায় নেমেছে। তারা চামড়ার দাম না-ও পেতে পারে।