নিতাইগঞ্জে লবণের বাজার চাঙা, দাম বাড়তি
কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে অপরিশোধিত (আয়োডিনবিহীন) লবণের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চাঙা নারায়ণগঞ্জের পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র নিতাইগঞ্জের লবণের বাজার। সেখানে চামড়া সংরক্ষণে ব্যবহৃত প্রতি বস্তা অপরিশোধিত (৭৪ কেজি) লবণের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। অপরিশোধিত লবণের পাশাপাশি বেড়ে গেছে খাওয়ার লবণের (আয়োডিনযুক্ত) দামও। খাওয়ার লবণের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি (২৫ কেজি) ৩০ থেকে ৫০ টাকা।
কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে ব্যবহৃত মোটা অপরিশোধিত আয়োডিনবিহীন উন্নত মানের সাদা লবণের ৭৪ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়।
লবণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের চেয়ে বেচাকেনা ভালো। চাহিদা বাড়লেও বাজারে লবণের কোনো ঘাটতি নেই। তবে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে। চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীরা লবণের দাম বাড়াচ্ছেন। লবণের দাম বেশি হওয়ার কারণে চামড়া সংরক্ষণের খরচ বাড়বে। গতকাল সোমবার দেশের আটা, ময়দা, তেল, চিনি, লবণ, ডাল, ভোজ্যতেলের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র নিতাইগঞ্জ ঘুরে লবণ ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
লবণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের চেয়ে বেচাকেনা ভালো। চাহিদা বাড়লেও বাজারে লবণের কোনো ঘাটতি নেই। তবে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে ব্যবহৃত মোটা অপরিশোধিত আয়োডিনবিহীন উন্নত মানের সাদা লবণের ৭৪ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। আর সামান্য ময়লাযুক্ত অপরিশোধিত লবণ ৬৮০ টাকা এবং বেশি ময়লাযুক্ত অপরিশোধিত লবণের বস্তা ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব লবণের প্রতি বস্তা গত জুনে যথাক্রমে ৬৫০ টাকা, ৫৬০ টাকা ও ৫৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
বাজারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের খাওয়ার লবণের দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে বেড়েছে।
এ ছাড়া নিতাইগঞ্জ বাজারে আয়োডিনযুক্ত লবণের মধ্যে কনফিডেন্স ব্র্যান্ডের ২৫ কেজির বস্তা ৬৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগে এ লবণের দাম ছিল ৫৯০ টাকা। এ ছাড়া ৪৮০ টাকা দামের ফুলকপি ব্র্যান্ডের প্রতি বস্তা লবণ এখন ৫৫০ টাকা, এসিআইয়ের পিওর ব্র্যান্ডের প্রতি বস্তা লবণের দাম ৫৫ টাকা বেড়ে ৬৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মোল্লা সুপার ও তীর ব্র্যান্ডের প্রতি বস্তা লবণের দাম ৫০ টাকা করে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৬৩০ ও ৫২০ টাকায়। বাজারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের খাওয়ার লবণের দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে বেড়েছে।
চামড়া সংরক্ষণে গত বছর প্রতি বস্তা লবণ কিনেছিলাম ৫৫০ টাকায়। এ বছর ৭৪ কেজির প্রতি বস্তা লবণ কিনেছি ৭৫০ টাকায়।’ তাতে এ বছর চামড়া সংরক্ষণে খরচ বেড়ে যাবেআবদুর রহমান, চামড়া ব্যবসায়ী, নরসিংহপুর
নরসিংহপুর এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবছর কোরবানির সময় চামড়া কিনে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করি। দাম যখন বেশি পাওয়া যায়, তখন চামড়া বিক্রি করি। প্রতিবছর কোরবানির সময় দুই থেকে পাঁচ হাজার পিচ পর্যন্ত চামড়া কিনে সংরক্ষণ করি। আর চামড়া সংরক্ষণে গত বছর প্রতি বস্তা লবণ কিনেছিলাম ৫৫০ টাকায়। এ বছর ৭৪ কেজির প্রতি বস্তা লবণ কিনেছি ৭৫০ টাকায়।’ তাতে এ বছর চামড়া সংরক্ষণে খরচ বেড়ে যাবে বলে জানান আবদুর রহমান।
মুন্সিগঞ্জের সিপাহিপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী সোহরাব মিয়া বলেন, তাঁর দোকানে বিক্রির জন্য ১০০ বস্তা লবণ কিনেছেন নিতাইগঞ্জ থেকে। অপরিশোধিত প্রতি বস্তা লবণের দাম পড়েছে ৭৪০ টাকা। এর সঙ্গে আছে পরিবহন খরচ। তাতে প্রতি বস্তা লবণ খুচরায় তাঁকে ক্রয়মূল্যের চেয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হবে।
নিতাইগঞ্জের লবণ ব্যবসায়ীরা জানান, এ এলাকায় উৎপাদিত লবণ রাজধানীর পুরান ঢাকা, উত্তরা, নরসিংদী, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, ভৈরবসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়।
নিতাইগঞ্জের লবণ ব্যবসায়ীরা জানান, এ এলাকায় উৎপাদিত লবণ রাজধানীর পুরান ঢাকা, উত্তরা, নরসিংদী, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, ভৈরবসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। আগে আরও অনেক জেলায় এখান থেকে লবণ যেত। কিন্তু দেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন করে মোকাম ও মিল গড়ে ওঠায় এবং যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির কারণে ব্যবসায়ীরা সরাসরি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে লবণ কেনেন।
লবণের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, কক্সবাজার, টেকনাফ, ইসলামপুর, পটিয়া ও কুতুবদিয়া অঞ্চলের লবণচাষিরা উৎপাদিত লবণ মজুত করায় দাম বেড়ে গেছে।
জেলায় ৩০ থেকে ৩৫টি লবণ মিল রয়েছে। এর মধ্যে চালু আছে ১০ থেকে ১২টি। বাজারে লবণের কোনো ঘাটতি নেই। তাই বলা যায়, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে নতুন করে লবণের দাম বাড়বে না।পরিতোষ কান্তি সাহা, সভাপতি, লবণ মিল মালিক সমিতি নারায়ণগঞ্জ জেলা
গরীবে নেওয়াজ সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের চাষিদের কাছ থেকে ১০০ বস্তা ক্রুড লবণ এনে মিলে ক্রাসিংয়ের পর পাওয়া যায় ৯০ বস্তা লবণ। তাতে পরিবহন খরচসহ প্রতি বস্তা অপরিশোধিত লবণ ক্রাসিংয়ে খরচ পড়ে ১০০ টাকা। তিনি বলেন, আগে ২৬ হাজার টাকা গাড়িভাড়া ছিল। এখন সেই গাড়িভাড়া ৩৬ হাজার টাকা হয়ে গেছে। এসব কারণে লবণের দাম বাড়তি।
এম আর ভূঁইয়া সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক দিলীপ রায় প্রথম আলোকে বলেন, পরিবহন ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে লবণের দাম একটু বেশি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে লবণ মিল মালিক সমিতি নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি পরিতোষ কান্তি সাহা প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় ৩০ থেকে ৩৫টি লবণ মিল রয়েছে। এর মধ্যে চালু আছে ১০ থেকে ১২টি। বাজারে লবণের কোনো ঘাটতি নেই। তাই বলা যায়, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে নতুন করে লবণের দাম বাড়বে না।