ফুল গবেষণায় ৫০ একর জমির আবেদন কেন

প্রতিষ্ঠানটি যশোরের ঝিকরগাছায় একটি ফুল গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনে প্রচুর জমি চেয়েছে। তবে না করে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

কৃষিজমিতে যেখানে-সেখানে স্থাপনা না করতে কঠোর নির্দেশ আছে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের। তারপরও দেশে সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায়ে প্রতিনিয়ত কৃষিজমি নষ্ট করে স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। সে রকমই একটি তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)। প্রতিষ্ঠানটি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় একটি ফুল গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনে ৫০ একর জমি চেয়েছে। এটি পুরোটাই কৃষিজমি। সে জন্য এত বেশি কৃষিজমি দেওয়া যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বক্তব্য হলো, ফুল ও শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদের গবেষণা জোরদার করতে দেশে একটি আধুনিক গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করা জরুরি। এ ধরনের গবেষণাকেন্দ্র হলে দেশি ফুলের পাশাপাশি শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদের উন্নত জাত উদ্ভাবন করা যাবে। সরকারের কাছ থেকে এই জমি পেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও ফুল রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

বারি ‘ফুল গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প তৈরি করে সেটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। ২৪১ কোটি টাকার এ প্রকল্পে ৫০ একর জমি অধিগ্রহণে খরচ ধরা হয়েছে ১২৬ কোটি টাকা। পুরো টাকাই রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

একটি ফুল গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনে ৫০ একর জমি দেওয়া যাবে না। কৃষিজমি নষ্ট করে আবাসিকসহ অন্যান্য ভবন করা ঠিক হবে না।
মতিউর রহমান , অতিরিক্ত সচিব, পরিকল্পনা কমিশন।

এদিকে বারি প্রস্তাব পাঠানোর পর বৈঠকে বসেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমসহ পরিকল্পনা কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। একটি ফুল গবেষণাকেন্দ্র নির্মাণে কেন এত বেশি কৃষিজমির প্রয়োজন, তা নিয়ে বৈঠকে প্রশ্ন ওঠে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, কৃষিজমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিজমি যাতে নষ্ট না হয়, সে লক্ষ্যে যেখানে-সেখানে স্থাপনা করা যাবে না। একটি ফুল গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ৫০ একর কৃষিজমি বরাদ্দ দেওয়া যৌক্তিক হবে না বলে ওই বৈঠকে মত দেওয়া হয়।

পরিকল্পনা কমিশনের (কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন) অতিরিক্ত সচিব মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বলেছি, একটি ফুল গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনে ৫০ একর জমি দেওয়া যাবে না। কৃষিজমি নষ্ট করে আবাসিকসহ অন্যান্য ভবন করা ঠিক হবে না। যদি জমির প্রয়োজনই হয়, সেটি এক থেকে দুই একর নিতে পারে, এর বেশি নয়। আরেকটি উপায় আছে। সেটি হলো, যশোরে বিদ্যমান একটি ফুল বিক্রয়কেন্দ্র আছে, যেটিকে আরও সম্প্রসারণ করে সেখানে গবেষণাকেন্দ্র করা যেতে পারে।’

এদিকে প্রকল্পটির আওতায় ফুল গবেষণা শেখার জন্য ৫০ জন কর্মকর্তার বিদেশে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাসফর বাবদ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় তিন কোটি টাকা, যা নিয়েও প্রশ্ন আছে পরিকল্পনা কমিশনের।

আমরা ৫০ একর জমি অকৃষি খাতে ব্যবহার করব না। এটা কৃষিকাজেই ব্যবহৃত হবে। সেখানে ফুল নিয়ে গবেষণা হবে। ৫০ একর জমিতে অবকাঠামো নির্মিত হবে খুবই কম।
রীনা রানী সাহা, পরিচালক, বারি।

জানতে চাইলে বারির পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) রীনা রানী সাহা বলেন, ‘আমরা ৫০ একর জমি অকৃষি খাতে ব্যবহার করব না। এটি কৃষিকাজেই ব্যবহৃত হবে। সেখানে ফুল নিয়ে গবেষণা হবে। ৫০ একর জমিতে অবকাঠামো নির্মিত হবে খুবই কম।’ আর ফুল নিয়ে গবেষণা শিখতে কর্মকর্তাদের বিদেশে শিক্ষাসফরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু প্রস্তাবটি এখনো অনুমোদন পায়নি, তাই সেটি নিয়ে কিছু বলতে চাই না।’

যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএআইডির অর্থায়নে যশোরের ঝিকরগাছায় আগে একটি ফুল প্রক্রিয়া কেন্দ্র হয়েছে। কিন্তু সেখানেও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়েছে, যা এখনো সুরাহা হয়নি।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, যশোরের গদখালিতে ফুল নিয়ে এর আগে বেশ কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুলো থেকে কী ধরনের সুফল মিলছে, তাও জানা জরুরি।

এ প্রকল্পের আওতায় বিএআরআই ৫০ একর জায়গার মধ্যে আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ছয়তলা ফাউন্ডেশনে ছয়তলা ভবন ও চারতলা ভিত্তির ওপর চারতলা ভবন করতে চায় সংস্থাটি। এত আবাসিক ও অনাবাসিক ভবন নির্মাণ নিয়ে আপত্তি পরিকল্পনা কমিশনের।