ফ্ল্যাট কেনার আগে যা ভাববেন

নিজের বাজেট, ফ্ল্যাটের আকার, অবস্থান, বর্গফুটপ্রতি দাম ভেবে দেখতে হবে। এলাকার রাস্তাঘাট কেমন, আশপাশে বাজার ও স্কুল–কলেজ আছে কি না, তা–ও বিবেচনায় রাখতে হবে।

রাজধানীর মিরপুর িডওএইচএস–সংলগ্ন একটি বেসরকারি আবাসন প্রকল্প
ছবি: প্রথম আলো

নগরজীবনে বাড়ি করার সাধ থাকলেও বেশির ভাগেরই সাধ্য থাকে না। সে জন্য তাঁরা রাজধানী কিংবা বড় বড় শহরে ফ্ল্যাট কেনার চেষ্টা করেন। আবার অনেকের বাড়ি তৈরির সামর্থ্য থাকলেও ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে ভোগান্তির কথা ভেবে ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত নেন। মধ্যবিত্ত ও উচ্চমধ্যবিত্তের কাছে ফ্ল্যাটই এখন স্বপ্ন। তাই ফ্ল্যাট কেনার আগে নিজের বাজেট কত, কোন এলাকায় কিনবেন, ঋণ পাবেন কি না, ফ্ল্যাটের আয়তন ও নির্মাণসামগ্রীর দাম কেমন এবং কর কত দিতে হবে—এসব ভাবতে হবে। গভীর বিশ্লেষণের পরই ফ্ল্যাট কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কারণ, বেশির ভাগ ক্রেতা জীবনে একবারই ফ্ল্যাট কিনবেন, তাই বুঝেশুনে এগোতে হবে।

বাজেট

ফ্ল্যাট কেনার আগে প্রথমেই বাজেট নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ, সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মিল না থাকলে ফ্ল্যাট কেনা যাবে না কিংবা কাজটা কঠিন হয়ে পড়বে। রাজধানী ঢাকা শহরে কমবেশি ৫০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ২০ কোটি টাকার ফ্ল্যাটও আছে।

বর্তমানে গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারার মতো ধনী ও সচ্ছল বাসিন্দাদের এলাকায় আবাসন প্রতিষ্ঠানভেদে অভিজাত ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পড়ে। আবার এসব এলাকায় ১৫-২০ হাজার টাকা বর্গফুটের ফ্ল্যাটও মেলে। আর বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁও, মিরপুর, আশকোনা প্রভৃতি এলাকায় ফ্ল্যাট কিনলে প্রতি বর্গফুটের দাম পড়বে ৫–১০ হাজার টাকা। কোন এলাকায় কী রকম দাম, সেটি প্রথমে জেনে নিন। এরপর নিজের বাজেটের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন, কত বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন, অর্থাৎ সাধ পূরণে সাধ্যটা বিশ্লেষণ করে তবেই এগোবেন।

কোথায় কিনবেন

যেখানে ফ্ল্যাট কিনতে চান, সেখানকার ও আশপাশের রাস্তাঘাট ও যোগাযোগব্যবস্থা এবং বাজার কেমন—এসব বিষয়ে চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নিন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আশপাশে ভালো স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় আছে কি না, সেটি নিশ্চিত হোন। তা না হলে স্কুল–কলেজপড়ুয়া সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়বেন। আবার কর্মজীবীদের ক্ষেত্রে কর্মস্থল কতটা দূরে, সেটাও ফ্ল্যাট কেনার আগে আরেকটি বিবেচ্য বিষয় হতে পারে।

ঋণ

অভিজাত এলাকার বাইরে মোটামুটি মান ও আয়তনের একটি ফ্ল্যাট কিনতে হলে এক থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ করতে হবে। নগদে এত টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনার মতো সামর্থ্য অনেক মধ্যবিত্তের, এমনকি কোনো কোনো উচ্চমধ্যবিত্তেরও থাকে না। সে ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট ক্রয়ে ব্যাংকঋণই ভরসা। বিভিন্ন ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পাওয়া যায়। সুদের হার এখন ৯ শতাংশের মধ্যে। নিজে একটা অংশ দিয়ে বাকি টাকা ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট কেনেন অনেকে।

আয়তন

কেনার আগে ফ্ল্যাটের আয়তন বড় বিবেচ্য বিষয়। সাধারণত ১ হাজার ২০০ বর্গফুট থেকে ২ হাজার বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাটের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। তাই আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোও এই ধরনের ফ্ল্যাটই বেশি তৈরি করে। মনে রাখবেন, ফ্ল্যাটের সঙ্গে গাড়ির গ্যারেজও কিনতে হয়। সেটির জন্যও কয়েক লাখ টাকা বাড়তি গুনতে হয়।

কর

ফ্ল্যাট কিনলে আপনার টাকার ওপর কর দিতে হবে। এই করহার এলাকা ও আয়তনভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল ও দিলকুশায় ২০০ বর্গমিটারের কম ফ্ল্যাট কিনলে প্রতি বর্গমিটারে ৪ হাজার টাকা এবং ২০০ বর্গমিটারের বড় ফ্ল্যাট ও ভবন কিনলে প্রতি বর্গমিটারে ৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। আর ঢাকার ধানমন্ডি, মহাখালী ডিওএইচএস, লালমাটিয়া, উত্তরা, বসুন্ধরা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, কারওয়ান বাজার, বিজয়নগর, সেগুনবাগিচা ও নিকুঞ্জ এবং চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, খুলশী, আগ্রাবাদ ও নাসিরাবাদ এলাকায় ফ্ল্যাটের আকার ২০০ বর্গমিটারের কম হলে প্রতি বর্গমিটারে ৩ হাজার টাকা, ২০০ বর্গমিটারের বেশি হলে ৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে।