ফ্ল্যাট ক্রয় ও বাড়ি নির্মাণের জন্য ঋণদাতা সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)। বিশেষায়িত এ প্রতিষ্ঠানের মূল কাজই হলো গৃহঋণ বিতরণ। পাশাপাশি সংস্থাটি ফ্ল্যাট নিবন্ধন, আবাসন উন্নয়ন ও মেরামত এবং বাড়ি নির্মাণে সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্যও ঋণ দিয়ে থাকে।
সর্বোচ্চ ২৫ বছর মেয়াদি ঋণ দিয়ে থাকে বিএইচবিএফসি। ঋণের সর্বনিম্ন মেয়াদ পাঁচ বছর। প্রতিষ্ঠানটির ঋণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটির সুদ কম ও ঋণের সুদ সরল। অর্থাৎ সুদের ওপর সুদ আদায় করে না প্রতিষ্ঠানটি। কৃষকদের জন্য বিএইচবিএফসির ঋণের সুদ মাত্র ৭ শতাংশ। আর ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ।
সব ধরনের গ্রাহককে ঋণদানের পাশাপাশি কৃষক ও সরকারি কর্মচারীদের আবাসন ঋণ দেয় বিএইচবিএফসি। প্রতিষ্ঠানটির কৃষকদের যে ঋণ দেয়, তা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট কৃষককে অবশ্যই আরবান, উপজেলা সদর কিংবা গ্রোথ-সেন্টার এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। শহরে এ ধরনের ঋণ দেওয়া হয় না। এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের কম সুদে ঋণ পেতে হলে তাদের হতে হবে স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত।
বিএইচবিএফসি থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করতে চাইলে সাধারণত গ্রাহকের নিজের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা থাকতে হয়। অর্থাৎ ১ কোটি টাকার ঋণ প্রকল্পের জন্য ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। বাকি ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা গ্রাহকের নিজের থাকতে হয়। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখিয়ে ঋণ অনুমোদন করতে হয়। বিএইচবিএফসির ঋণের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আরও রয়েছে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সুবিধা। এখন কাগজপত্র তৈরিতে তারা সহায়তা করে।
প্রতিষ্ঠানটি বাড়ি নির্মাণ ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত ১২ ধরনের ঋণ দেয়। যেমন জিরো ইকুইটি আবাসন ঋণ, নগর বন্ধু, প্রবাস বন্ধু, পল্লীমা, কৃষক আবাসন ঋণ, আবাসন মেরামত, আবাসন উন্নয়ন, ফ্ল্যাট ঋণ, ফ্ল্যাট নিবন্ধন ঋণ, হাউজিং ইকুইপমেন্ট ক্রয় ঋণ, সরকারি কর্মচারীদের জন্য গৃহ নির্মাণ ও ইসলামি শরিয়াভিত্তিক বাড়ি নির্মাণ বিনিয়োগ ‘মনজিল’।
২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি তার ইতিহাসের সর্বোচ্চ ঋণ বিতরণ করে। এ সময়ে ঋণ মঞ্জুরি, ঋণ আদায়, শ্রেণিকৃত ঋণহার হ্রাস ও ঋণের স্থিতি হিসাবেও রেকর্ড গড়ে। ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৫১৪ কোটি টাকা। ঋণ আদায় হয়েছিল ৫৬৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছর শেষে শ্রেণিকৃত ঋণহার দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
চলতি (২০২১-২২) অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি মোট ৫০৮ কোটি টাকার গৃহঋণ মঞ্জুর করেছে। এর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৪২৬ কোটি টাকা। এই অর্থবছরে এসে প্রতিষ্ঠানটির শ্রেণিকৃত ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির উপমহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ) মো. বদিউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি ২০২০-২১ অর্থবছরে কার্যক্রমের ভিত্তিতে সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আওতাধীন ১৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম হয়েছে। চলতি অর্থবছরেও সেই ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য পরিচালনা পর্ষদসহ সংশ্লিষ্ট সবাই কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য দেশের মানুষদের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে বাড়ি নির্মাণে সহায়তা করা।’
জিরো ইকুইটি আবাসন ঋণ
এ ঋণের বড় সুবিধা হলো ঋণ পেতে গ্রাহকের নিজস্ব কোনো বিনিয়োগ লাগে না। শুধু জমি থাকলেই এ ঋণ মেলে। ঋণ পেতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকা বাদে অন্য সব বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা সদর ও গ্রোথ সেন্টার এলাকায় অন্তত ৪ শতাংশ নিষ্কণ্টক জমি থাকতে হয়, যেখানে বাড়ির আঁকার হবে ৬০০ থেকে ৯০০ বর্গফুটের। এককভাবে বা স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের নামে যৌথভাবে এ ঋণ নেওয়া যায়। সুদের হার ৭ থেকে ৮ শতাংশ। ঋণ নেওয়া যাবে ৫ থেকে ২০ বছর মেয়াদে।
মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে বাজারে আনা এ পণ্য নিতে এ বছরের ৩০ জুনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এরপর নতুন চালু করা এ ঋণ থাকবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদ। এ কর্মসূচির আওতায় সর্বোচ্চ ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার ঋণ মেলে।
ইসলামি বাড়ি নির্মাণ বিনিয়োগ
বাড়ি নির্মাণের জন্য ইসলামি শরিয়াভিত্তিক বাড়ি নির্মাণ বিনিয়োগের সুযোগও রয়েছে বিএইচবিএফসিতে।গ্রাহকেরা ৫ থেকে ২০ বছর মেয়াদে এই বিনিয়োগ সুবিধা নিতে পারবেন।ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট মহানগর অঞ্চল ব্যতীত দেশের সব বিভাগীয় ও জেলা-উপজেলা সদর ও গ্রোথ সেন্টার এলাকার নাগরিকেরা এই সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন।তবে সে ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী গ্রহীতার নিজস্ব বিনিয়োগ থাকতে হবে ২০ শতাংশ।