যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যেখানে ভিয়েতনামের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ

ছবি: প্রথম আলো

বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনামের কাছে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের কাছে থাকা দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানির মুকুট ছিনিয়ে নিয়েছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও ভিয়েতনাম বরাবরই ভালো করছে। সেখানে বাংলাদেশের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি পোশাক রপ্তানি করে দেশটি। প্রবৃদ্ধিতেও এগিয়ে থাকে।

অবশ্য চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। এই সময়ে বাংলাদেশ ৩১৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে ৬৮১ কোটি ডলারের পোশাক। তাদের রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। তাতে ছয় মাসের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলতে হলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়াতে হবে দ্বিগুণের বেশি।

এদিকে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বাজার হিস্যাও কিছুটা বেড়েছে। গত বছর বাংলাদেশের বাজার হিস্যা ছিল ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। বর্তমানে সেটি বেড়ে ৮ দশমিক ২৩ শতাংশ হয়েছে। যদিও ভিয়েতনামের বাজার হিস্যা ১৯ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশি পোশাকের বড় বাজার। তবে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বাজারটিতে রপ্তানি কমে যায়। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সাল থেকে অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। ইতিমধ্যে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নেও ব্যাপক অগ্রগতি হয় বাংলাদেশের।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৩ হাজার ৫৩৭ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছেন। এই আমদানি গত বছরের প্রথম ছয় মাসের চেয়ে ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি। তার মানে সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ পোশাক আমদানি বাড়িয়েছে, বাংলাদেশের রপ্তানিও সমপরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশি পোশাকের বড় বাজার। তবে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে বাজারটিতে রপ্তানি কমে যায়। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৯ সাল থেকে অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করে। ইতিমধ্যে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নেও ব্যাপক অগ্রগতি হয় বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালে ৫৯৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। গত বছরও শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিল। পরে অবশ্য করোনার থাবায় রপ্তানি নিম্নমুখী হতে থাকে। বছর শেষে ৫২২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়।
পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিপুলসংখ্যক মানুষের টিকা নেওয়া শেষ। বিধিনিষেধও তুলে নেওয়া হয়েছে। তাতে হঠাৎ করেই পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে।

অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর করোনায় বিপর্যস্ত হওয়ার পরও বেশ ভালোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারত। এই বাজারে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে তারা ২০৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি।

অনেক ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্রে পণ্যের সংকটও রয়েছে। ফলে ক্রেতারা প্রচুর ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন। আবার চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমার থেকে কিছু ক্রয়াদেশ স্থানান্তরিত হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। সে জন্য বাজারটিতে পোশাকের রপ্তানি বাড়ছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে চীন। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৭৩১ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাক আমদানির ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ সরবরাহ করেছেন চীনা উদ্যোক্তারা। ২০১৯ সালের শেষে তাদের বাজার হিস্যা ছিল ২৯ শতাংশের বেশি।

অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর করোনায় বিপর্যস্ত হওয়ার পরও বেশ ভালোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারত। এই বাজারে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে তারা ২০৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি। বর্তমানে ভারতের বাজার হিস্যা ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়া চলতি বছরের প্রথমার্ধে ১৮৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। তাদের রপ্তানি বেড়েছে ৩ শতাংশের কাছাকাছি।