সুরক্ষাসামগ্রীর বাজার ৫১ হাজার কোটি ডলারের বেশি

প্রবৃদ্ধির সুযোগ সম্প্রসারণ: মেডিকেল ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (এমপিপিই) উৎপাদন ও রপ্তানি’ শীর্ষক বিল্ডের ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় অংশ নেওয়া বক্তারা
ছবি: বিল্ডের সৌজন্যে

করোনাকালে সারা বিশ্বে মেডিকেল ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (এমপিপিই) চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাতে সার্জিক্যাল মাস্কের বাজার বেড়েছে ৫০০-১২০০ শতাংশ। এ ছাড়া মেডিকেল গ্লাভস ২০০-৬০০ শতাংশ, গাউন ১০০-২০০, জুতার কাভার ৫০-১০০, অ্যাপ্রোন ৫০-১০০ এবং সুরক্ষা চাশমার বাজার বেড়েছে ২৫-৫০ শতাংশ। সব মিলিয়ে চলতি বছর এমপিপিইর বৈশ্বিক বাজার দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার কোটি ডলার থেকে ৫৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।

এমপিপিইর বাজারে ছড়ি ঘোরাচ্ছে চীন। দেশটি একাই ১৮ হাজার কোটি ডলারের এমপিপিই রপ্তানি করছে। তার পরের অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রপ্তানি করে ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের মেডিকেল ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম। তা ছাড়া জার্মানি ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার ও ভিয়েতনাম ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের এমপিপিই রপ্তানি করে।

‘প্রবৃদ্ধির সুযোগ সম্প্রসারণ: মেডিকেল ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (এমপিপিই) উৎপাদন ও রপ্তানি’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় এমন তথ্য জানানো হয়। ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে গঠিত গবেষণা সংস্থা বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) আয়োজনে আজ সোমবার অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় সহায়তা করেছে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডেলয়েট।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পণ্য রপ্তানি বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি শিল্পায়ন বিকাশে এমপিপিই গুরুত্বপূর্ণ খাত। এ খাতের উন্নয়নে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।

বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, একটি কৌশলগত উপায়ে এমপিপিই খাতকে সম্প্রসারিত করতে হবে। এ ছাড়া কিছু লক্ষ্য স্থির করে এ খাতে সঠিক প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। এ খাতের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বয় জরুরি। এ খাতে কতটুকু উন্নয়ন হলো ও খাতসংশ্লিষ্টরা কী ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, সে বিষয়ে সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তৈরি পোশাক খাতের ওপর থেকে অতিনির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানিতে বৈচিত্র্য নিশ্চিত করা। এই মন্তব্য করে বিল্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাসেম খান বলেন, রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো কৌশল হলো নিজেদের শক্তির জায়গাগুলোতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া। বাংলাদেশ যেহেতু তৈরি পোশাক ও বস্ত্র, প্লাস্টিক এবং ওষুধ খাতে আগে থেকেই স্বয়ংসম্পূর্ণ, সে জন্য এমপিপিই উৎপাদনে অনেকাংশেই এগিয়ে রয়েছি আমরা। ফলে রপ্তানি বৈচিত্র্যে এমপিপিই খাতে জোর দেওয়াটা অবশ্যই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

আইএফসির ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ম্যানেজার নুজহাত আনোয়ার বলেন, মেডিকেল ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন ও রপ্তানিতে কিছুটা জ্ঞানের অভাব রয়েছে। সেসব ঘাটতি পূরণে সহায়তা দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছে আইএফসি।

বিল্ডের গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর উপস্থাপনা করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফেরদৌস আরা বেগম। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ১২টি এমপিপিই পণ্য উৎপাদনে যথেষ্ট অগ্রগতি অর্জন করেছে। তার মধ্যে ৮টি পণ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তালিকায় আছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৩টি প্রতিষ্ঠান সার্জিক্যাল মাস্ক ও ৫৭টি প্রতিষ্ঠান পিপিই গাউনের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে কাছ থেকে অনাপত্তি সনদ পেয়েছে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের ওষুধ খাত স্থানীয় চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করছে। পাশাপাশি ৫৭টি দেশে রপ্তানি করছে। তবে ৯৫ শতাংশ মেডিকেল পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি হয়।

আরও বক্তব্য দেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি শামীম আহমেদ, বুয়েটের শিক্ষক মহিবুস সামাদ খান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম প্রমুখ।