দেশি–বিদেশি গন্তব্যে বাড়ল উড়োজাহাজের টিকিটের দাম

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজপ্রতীকী ছবি

আকাশপথে দেশি-বিদেশি গন্তব্যে উড়োজাহাজের টিকিটের দাম বাড়িয়েছে বিমান সংস্থাগুলো। ফলে যাঁরা এখন দেশি-বিদেশি গন্তব্যে নতুন করে টিকিট কিনতে যাচ্ছেন, তাঁদের বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে আকাশপথে বিমান ভ্রমণে আবগারি শুল্ক বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর। এরই মধ্যে বর্ধিত সেই শুল্ক টিকিটের দামের সঙ্গে যুক্ত করে নতুন দামে টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বিমান সংস্থাগুলো।

অভ্যন্তরীণ পথে বিমানযাত্রায় আবগারি শুল্ক ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করেছে সরকার। আর সার্কভুক্ত যেকোনো দেশ ভ্রমণে আবগারি শুল্ক ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে। সার্কভুক্ত দেশের বাইরে এশিয়ার মধ্যে যেকোনো দেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক দুই হাজার থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা এবং ইউরোপ ও আমেরিকার দেশ ভ্রমণে তা এক হাজার বাড়িয়ে চার হাজার টাকা করা হয়েছে।

দেশীয় বেসরকারি কয়েকটি বিমান সংস্থা ও ট্রাভেল এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এত দিন অভ্যন্তরীণ পথে একেকটি টিকিটে সব মিলিয়ে ৯৭৫ টাকা শুল্ক-কর ছিল। সেটি বেড়ে এখন ১ হাজার ১৭৫ টাকা হয়েছে। আবার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াগামী প্রতিটি টিকিটে এত দিন সাড়ে ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা শুল্ক-কর ছিল; এখন তা আরও ৫০০ টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ চারজনের একটি পরিবার থাইল্যান্ডে যেতে চাইলে তাঁদের আগের চেয়ে দুই হাজার টাকা বেশি শুল্ক-কর দিতে হবে। তবে যাঁরা এনবিআরের প্রজ্ঞাপন জারির আগে টিকিট বুকিং দিয়েছেন বা অগ্রিম টিকিট কেটেছেন, তাঁরা নতুন শুল্কের আওতামুক্ত থাকছেন। কোম্পানিগুলো বলছে, যাঁরা আগাম টিকিট কেটে রেখেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে নতুন শুল্ক আরোপ করা বাস্তবসম্মত নয়।

কোম্পানিগুলো যা বলছে

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পথে শুল্ক বাড়ানোর ফলে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়বে দেশীয় বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো। দেশের অভ্যন্তরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট পরিচালনা করে। এর মধ্যে রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস–বাংলা, নভোএয়ার ও এয়ার অ্যাস্ট্রা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, রাজশাহী, যশোর, সৈয়দপুর ও বরিশাল—এই আটটি পথে তাদের প্রতিদিন শতাধিক ফ্লাইট চলাচল করে।

এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, অভ্যন্তরীণ পথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক ২০০ টাকা বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। তার মানে প্রায় ৪০ শতাংশ শুল্ক বেড়েছে। এটি অস্বাভাবিক একটা বিষয়।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম জানান, তাঁরা সাধারণত জুলাই মাস (অর্থবছর) ধরে ব্যবসার পরিকল্পনা সাজান। ফলে বছরের মাঝপথে হুট করে আবগারি শুল্ক বাড়ানোয় ব্যবসা ও ভোক্তা পর্যায়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পর্যটনের ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত যাত্রী থাকায় এখনই হয়তো বিমান সংস্থাগুলো সেই প্রভাব টের পাবে না। তবে অফ সিজনে শুল্ক বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব বেশি টের পাবে প্রতিষ্ঠানগুলো।

কামরুল ইসলাম বলেন, আকাশপথে যাতায়াত এখন আর শৌখিন সেবা নয়। এটি অনেকটা প্রয়োজনীয় সেবার মতো হয়ে গেছে। ফলে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে এই শুল্ক প্রত্যাহার করা উচিত।

অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে এমন নীতি পরিবর্তন দেশের সব বেসরকারি বিমান সংস্থার জন্য একটি গভীর ক্ষত তৈরি করবে। টিকিটের ওপর প্রায় ৪০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি হয়েছে
ইমরান আসিফ, প্রধান নির্বাহী, এয়ার অ্যাস্ট্রা

দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠান বিদেশে, বিশেষ করে আশপাশের দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে। কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা জানান, এখন শীতের মৌসুম; পর্যটনের চাহিদা বেশি। স্বাভাবিক সময়ে শীত মৌসুমে ভারতে প্রচুর পর্যটক যায়; কিন্তু বর্তমানে দেশটিতে পর্যটন ভিসা বন্ধ থাকায় যাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এ জন্য এয়ারলাইনসগুলো ধুঁকছে। অন্যদিকে বর্তমানে ডলারের দাম আগের তুলনায় বেশি। ফলে নতুন করে শুল্ক বাড়ানোর কারণে টিকিটের দাম আরও বেড়েছে। শেষ পর্যন্ত এর ভুক্তভোগী হচ্ছেন ভোক্তারা। একজনের যাত্রার ক্ষেত্রে শুল্ক বৃদ্ধির পরিমাণটি খুব বেশি মনে না হলেও চার-পাঁচজন বা পরিবার নিয়ে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এটি অনেকের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করবে।

এয়ার অ্যাস্ট্রার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ বলেন, অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে এমন নীতি পরিবর্তন দেশের সব বেসরকারি বিমান সংস্থার জন্য একটি গভীর ক্ষত তৈরি করবে। টিকিটের ওপর প্রায় ৪০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি হয়েছে। অথচ অর্থ উপদেষ্টা এটাকে সামান্য বৃদ্ধি বলেছেন। এ ধরনের মন্তব্য ও কর বৃদ্ধির উদ্যোগে অনেকের মধ্যে এই ধারণা তৈরি হতে পারে যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে আমরা ‘ফ্রাইং প্যান থেকে জ্বলন্ত আগুনে’ পড়েছি।