ঢাকা-চট্টগ্রামে হোটেল ব্যবসা মন্দা, কক্সবাজারে বেশ চাঙা

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ—এই তিন মাস ঢাকা ও চট্টগ্রামের শহরের হোটেল ব্যবসায় ছিল চরম মন্দাভাব। একই সময়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের হোটেলগুলোয় ছিল ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই অবস্থা। আর সে কারণে ঢাকা–চট্টগ্রামে হোটেলে যখন চরম লোকসান, তখন কক্সবাজারের হোটেলে এ সময়ে বিপুল মুনাফা হয়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারকেন্দ্রিক তিন হোটেলের তিন মাসের আয়ের হিসাব পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকার ওয়েস্টিন, চট্টগ্রামের পেনিনসুলা ও কক্সবাজারের রয়েল টিউলিপ। এর মধ্যে ওয়েস্টিনের মালিকানা প্রতিষ্ঠান ইউনিক হোটেল, রয়েল টিউলিপের মালিকানা প্রতিষ্ঠান সি পার্ল নামে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। আর পেনিনসুলা হোটেল পেনিনসুলা নামেই তালিকাভুক্ত।

তবে শেয়ারবাজারের কোম্পানিগুলো শেয়ারের দামকে প্রভাবিত করতে অনেক সময় আর্থিক বিবরণীতে ভুল বা মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করে। শেয়ারবাজারে দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে অনেক কোম্পানি ইপিএস বা মুনাফা বাড়িয়ে দেখায়। আর যখন শেয়ারের দাম কমানোর প্রয়োজন মনে করে, তখন অনেক কোম্পানি মুনাফা কমিয়ে দেখায়। এ কারণে শেয়ারবাজারের অনেক কোম্পানির ইপিএস নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সব সময়ই সন্দেহ বা প্রশ্ন থেকে যায়। এ প্রতিবেদনে কোম্পানিগুলোর প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন ও ইপিএসকে বিবেচনায় নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ইপিএসের সত্য-মিথ্যা যাচাই করা হয়নি।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকার ওয়েস্টিন, চট্টগ্রামের পেনিনসুলা ও কক্সবাজারের রয়েল টিউলিপ। এর মধ্যে ওয়েস্টিনের মালিকানা প্রতিষ্ঠান ইউনিক হোটেল, রয়েল টিউলিপের মালিকানা প্রতিষ্ঠান সি পার্ল নামে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। আর পেনিনসুলা হোটেল পেনিনসুলা নামেই তালিকাভুক্ত।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলের ব্যবসায় ধস নেমেছে। এ কারণে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ১১ পয়সা ঋণাত্মক হয়ে গেছে। অর্থাৎ বছরের প্রথম তিন মাসে ওয়েস্টিন হোটেল শেয়ারপ্রতি ১১ পয়সা করে লোকসান করেছে।

লোকসানে ঢাকার ওয়েস্টিন

এ তিন হোটেলের মধ্যে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলের ব্যবসায় ধস নেমেছে। এ কারণে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ১১ পয়সা ঋণাত্মক হয়ে গেছে। অর্থাৎ বছরের প্রথম তিন মাসে ওয়েস্টিন হোটেল শেয়ারপ্রতি ১১ পয়সা করে লোকসান করেছে। অথচ আগের বছর একই সময়ে হোটেলটি শেয়ারপ্রতি ১৭ পয়সা করে মুনাফা করেছিল। গতকাল সোমবার কোম্পানিটি আর্থিক বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে কোম্পানিটি বলেছে, করোনার কারণে আগের বছরের চেয়ে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৬৭ শতাংশ আয় কমে গেছে। পাশাপাশি পৌনে পাঁচ কোটি টাকা নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিং করতে হয়েছে। যার কারণে মুনাফা কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে ইপিএসে।
ইপিএস বা মুনাফা কমার খবরে গতকাল সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম পৌনে ২ শতাংশ বা ৬০ পয়সা কমে দাঁড়ায় ৩৩ টাকা ৪০ পয়সায়।

রয়েল টিউলিপের মুনাফায় ৫৬৭% প্রবৃদ্ধি

ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলের মুনাফায় যখন ধস নেমেছে, তখন কক্সবাজারের রয়েল টিউলিপ হোটেলের মুনাফা বেড়েছে প্রায় ৫৬৭ শতাংশ। অবাকই হচ্ছেন হয়তো। কিন্তু একবার পেছনে ফিরে তাকান তো। নিশ্চয় মনে আছে, গত ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজারে পর্যটকদের ছিল উপচে পড়া ভিড়। গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে করোনার সংক্রমণ নতুন করে আবার বাড়তে শুরু করার আগপর্যন্ত কক্সবাজারে হোটেলগুলোয় রুম পাওয়া ছিল রীতিমতো কষ্টের কাজ। ছোট, বড়, মাঝারি—সব ধরনের হোটেলে ছিল ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই অবস্থা। পর্যটকদের বিপুল চাহিদার কারণে ওই সময়ে কক্সবাজারে নামীদামি হোটেলগুলোর ভাড়াও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেড়ে গিয়েছিল।

রয়েল টিউলিপের মুনাফার তথ্যেও সেই বাড়তি ভাড়ার সুফল দেখা গেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে রয়েল টিউলিপের কর–পরবর্তী মুনাফা হয়েছে প্রায় সোয়া সাত কোটি টাকা। তাতে উল্লেখিত সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস বেড়ে হয়েছে ৬০ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির কর–পরবর্তী মুনাফা ছিল মাত্র এক কোটি টাকা, যাতে গত বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটির ইপিএস ছিল মাত্র ৯ পয়সা। অর্থাৎ করোনাকালেও তিন মাস খুবই ভালো ব্যবসা করেছে রয়েল টিউলিপ।

তবে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এপ্রিল থেকে আবারও পর্যটন ব্যবসা বলতে গেলে প্রায় বন্ধ রয়েছে। এ ধাক্কা লাগবে কোম্পানির আয়েও। আর সেটির প্রতিফলন ঘটবে এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে। তা জানতে অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও বেশ কিছুদিন।
এদিকে মুনাফা বাড়লেও প্রায় এক বছর ধরে কোম্পানিটির শেয়ার একই দামে আটকে আছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেঁধে দেওয়া ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তরে গত মার্চ থেকে আটকে আছে এটির শেয়ারের বাজারমূল্য। গতকাল সোমবার এটির শেয়ারের দাম ছিল ৭৯ টাকা ১০ পয়সা। এখন দেখার বিষয় বিপুল মুনাফার খবরে আজ মঙ্গলবার এটির শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইস থেকে ওপরে উঠতে পারে কি না?

পেনিনসুলার ইপিএস কমেছে ৭ পয়সা

চট্টগ্রামভিত্তিক এ হোটেলের মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশ কিছুটা কমেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাস ও কোম্পানিটির আর্থিক বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৪ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১১ পয়সা।