দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল সোমবার মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কোম্পানি আমরা টেকনোলজিস। গতকাল দিন শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ২ টাকা ৩০ পয়সা বা প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ টাকা ৫০ পয়সায়।
গত প্রায় তিন মাসের মধ্যে ডিএসইতে গতকাল লেনদেন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। গত ২৯ আগস্ট কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২২ টাকা ৮০ পয়সা। এরপর থেকে গতকাল পর্যন্ত কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ৫ টাকা ৭০ পয়সা। তবে এ মূল্যবৃদ্ধি একটানা ছিল না। উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত দুদিনে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ২ টাকা ৮০ পয়সা বেড়েছে। ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কোম্পানিটির মূল্য সংবেদনশীল তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, এক দিনে প্রায় ৯ শতাংশ দাম বেড়ে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে অবস্থান করার মতো কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। তবে সম্প্রতি কোম্পানিটি লভ্যাংশ ও আর্থিক বছরের এক প্রান্তিক আয়-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে। যেদিন এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়, তাৎক্ষণিকভাবে শেয়ারের বাজারমূল্যে তার প্রভাব পড়তে দেখা গেছে। এ কারণে বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ কেউ গত দুদিনের মূল্যবৃদ্ধিকে ‘মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের’ বিলম্বিত প্রভাব হিসেবে মনে করছেন। আরেকটি অংশ মনে করছে, এটি স্বাভাবিক প্রবণতা।
এবার কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির গত কিছুদিনের গতিবিধি কেমন ছিল তা দেখা যাক। মিলিয়ে দেখা যাক মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের প্রভাব কেমন ছিল কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্যে।
গত ১০ অক্টোবর ছিল আমরা টেকনোলজিসের পরিচালনা পর্ষদের লভ্যাংশ ঘোষণা-সংক্রান্ত সভা। ওই সভা থেকে শেয়ারধারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের ঘোষণা আসে, যা ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় ১৩ অক্টোবর। কিন্তু তার আগে লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ১০ অক্টোবর থেকেই বাজারে এটির শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করে। তাতে সাত কার্যদিবসে প্রতিটি শেয়ারের দাম বাড়ে প্রায় পৌনে চার টাকা। এরপর কমতে শুরু করে। পাঁচ কার্যদিবসে দাম ৩ টাকা ৪০ পয়সা কমে যায়।
এদিকে, ৭ নভেম্বর ছিল কোম্পানিটির ঘোষিত লভ্যাংশ পাওয়ার দাবিদার নির্ধারণের রেকর্ড ডেট। সেদিন লেনদেন বন্ধ ছিল কোম্পানিটির। ওই দিন যেসব বিনিয়োগকারীর হাতে কোম্পানিটির শেয়ার ছিল, তাদের মাঝেই লভ্যাংশ বিতরণ করা হবে। রেকর্ড ডেটের পর ৯ নভেম্বর থেকে আবারও বাড়তে শুরু করে শেয়ারের বাজারমূল্য। এর মধ্যে কয়েক দিনের উত্থান-পতন শেষে গতকাল দিন শেষে যা তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
অপরদিকে, ১৫ নভেম্বর চলতি আর্থিক বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, এ বছর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ পয়সা বেড়েছে। এ খবরে পরপর দুদিন দরপতন ঘটে শেয়ারের দামের। কিন্তু দুদিন ধরে কোনো তথ্য ছাড়াই দাম আবার বাড়ছে। তাই এ মূল্যবৃদ্ধিকে প্রকাশিত তথ্যের বিলম্বিত প্রভাব, নাকি অন্য কিছু, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এদিকে চার দিন টানা বৃদ্ধির পর গতকাল ঢাকার বাজারে সূচক সামান্য কমেছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১ পয়েন্টের মতো কমেছে। তবে দিন শেষে বেড়েছে লেনদেন। গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬১১ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৩৭ কোটি টাকা বেশি।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি গতকাল প্রায় ৫ পয়েন্ট বেড়েছে। আর লেনদেনও আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ কোটি টাকায়।