পি কের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের পর্ষদ পুনর্গঠন করল বিএসইসি

পি কে হালদারের ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবতে বসা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এফএএস ফাইন্যান্সের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গতকাল সোমবার এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে সংস্থাটি। বর্তমান পর্ষদ ভেঙে নতুন করে পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিটির বর্তমান পর্ষদে ছিলেন পি কে হালদারের মনোনীত প্রতিনিধিরা।

আরও পড়ুন

বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা সম্মিলিতভাবে সব সময় ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিধান পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছেন। সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিলের হিসাবে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে সম্মিলিতভাবে শেয়ার ছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। বিএসইসির বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এফএএস ফাইন্যান্সের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন করে ৭ সদস্যের পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। ৭ সদস্যের নতুন পর্ষদে ৫ জন থাকবেন বিএসইসি নিযুক্ত স্বতন্ত্র পরিচালক আর ২ জন থাকবেন উদ্যোক্তা পরিচালক।

বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা সম্মিলিতভাবে সব সময় ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বিধান পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছেন। সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিলের হিসাবে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে সম্মিলিতভাবে শেয়ার ছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ।

নতুন পর্ষদে যে ৫ জনকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন, এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন খান, অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে থাকা সেনা কর্মকর্তা আবু সৈয়দ মোহাম্মদ আলী, ঋণমান যাচাইকারী সংস্থা ক্রেডিট রেটিং ইনফরমেশন অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (সিআরআইএসএল) উপপ্রধান নির্বাহী সৈয়দ আবদুল্লাহ আল মামুন ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের ফ্যাকাল্টি মেম্বার মো.সেলিম। এ পাঁচ স্বতন্ত্র পরিচালকের মধ্যে নুরুল আমিনকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল এ আদেশ কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান সদস্যের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিনকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এফএএস ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে পি কে হালদারের ব্যবসায়িক অংশীদার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

জানতে চাইলে মোহাম্মদ নুরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল বিকেলে বিএসইসির এ-সংক্রান্ত চিঠি আমি পেয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নেব। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।’
বর্তমানে এফএএস ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে পি কে হালদারের ব্যবসায়িক অংশীদার মো. জাহাঙ্গীর আলম। আর পি কে হালদারের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পিঅ্যান্ডএল ইন্টারন্যাশনাল ও রেপটাইলস ফার্মের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে পাঁচজন পরিচালক রয়েছেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক রয়েছেন দুজন। বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, বর্তমান স্বতন্ত্র পরিচালকেরা দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। শুধু প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় থাকা পিঅ্যান্ডএল ইন্টারন্যাশনাল ও রেপটাইলস ফার্মের একজন করে দুজন প্রতিনিধি নতুন পর্ষদে থাকতে পারবেন।

পি কে হালদার ২০১৪-১৫ সালের দিকে নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠানটির দখল নেন। দখলে নেওয়ার পর ২০১৫-১৭ সালের মধ্যে বিভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ১ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকার সুবিধাভোগী পি কে হালদার একাই, যে টাকা আর ফেরত আসছে না।

পি কে হালদার ২০১৪-১৫ সালের দিকে নামে-বেনামে প্রতিষ্ঠানটির দখল নেন। দখলে নেওয়ার পর ২০১৫-১৭ সালের মধ্যে বিভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ১ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা বের করে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ১৮১ কোটি টাকার সুবিধাভোগী পি কে হালদার একাই, যে টাকা আর ফেরত আসছে না। এমন পরিস্থিতিতে এটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করল বিএসইসি।
শেয়ারবাজারে গতকাল দিন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ৫ টাকা ৭০ পয়সা। গত বছর প্রথম আলোতে পি কে হালদারের আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এরপরই বেরিয়ে আসে এফএএস ফাইন্যান্সসহ বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা। নানা কৌশলে এসব প্রতিষ্ঠান দখল করে নামে-বেনামে বিপুল ঋণ বের করে নেন পি কে হালদার। তার জেরে এফএএস ফাইন্যান্সের শেয়ারের দাম কমে অর্ধেকে নেমে আসে।

আরও পড়ুন