বিএসইসি চায় টাকা আসুক

পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল থেকে আইসিবিকে ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। আগের দিন শেয়ার কেনার সর্বোচ্চ ঋণসীমা প্রত্যাহার করা হয়।

পুঁজিবাজারে অর্থের প্রবাহ বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। আগের দিন সোমবার নেওয়া এক সিদ্ধান্তের পর গতকাল মঙ্গলবার নতুন একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সংস্থাটি।

শেয়ার কেনার ঋণ পাওয়ার সঙ্গে মূল্যসূচক ৮ হাজার পয়েন্টে ওঠার সীমাটি সোমবার তুলে দেয় বিএসইসি। এর অর্থ হচ্ছে, মূল্যসূচক যত ওপরেই উঠুক না কেন, বিনিয়োগকারীরা মার্জিন লোন তথা শেয়ার কেনায় ঋণ পাবেন ১: .৮০ হারে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি গতকাল পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল (সিএমএসএফ) থেকে ১০০ কোটি টাকা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। সেকেন্ডারি মার্কেটে তারল্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে সিএমএসএফ থেকে এই টাকা মেয়াদি ঋণ হিসেবে আইসিবিকে দেবে। বিএসইসি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।

বিএসইসির সোমবারের পদক্ষেপের পর গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিএসইএক্স সূচক ১১৫ পয়েন্ট বেড়ে আবার ৭ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়েছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিএসইসির সোমবারের সিদ্ধান্তের পরই বাজার কিছুটা ইতিবাচক হয়েছে।

কিন্তু অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে থাকলে বাজার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ছাইদুর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীকেই বুঝতে হবে তিনি কোন শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন।

এর আগে গত ১ জুলাই পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল গঠনের গেজেট হয়। পুঁজিবাজারে বিভিন্ন কোম্পানির বিপুল পরিমাণ দাবিহীন ও অবণ্টিত অর্থ বিনিয়োগে আনাই এ তহবিল গঠনের উদ্দেশ্য বলে তখন জানিয়েছিল বিএসইসি। সংস্থাটি এমন ধারণাও দিয়েছিল যে দাবিহীন ও অবণ্টিত অর্থের পরিমাণ ১৭ হাজার কোটি টাকা।

সিএমএসএফের ১০ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান। বিএসইসির গতকালের সিদ্ধান্তের পর নজিবুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারের এই অবস্থায় তহবিলের পক্ষ থেকে অবদান রাখা প্রয়োজন বলে ভাবছিলাম। তাই বিএসইসির কাছে আইসিবিকে টাকা দেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। বিএসইসি অনুমোদন করায় আইসিবির সক্ষমতা বাড়বে, তহবিলেরও আয় বাড়বে। উভয় পক্ষের জন্যই ভালো হলো।’

জানা গেছে, বর্তমানে সিএমএসএফে জমা থাকা ৪৫০ কোটি টাকা থেকে আইসিবিকে ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে। এর বিপরীতে আইসিবি সুদ দেবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

জেএমআইর আইপিও অনুমোদন

এদিকে জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং নামের একটি কোম্পানিকে শেয়ারবাজার থেকে ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছে বিএসইসি। বুক বিল্ডিং পদ্ধতির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে এই টাকা তুলবে কোম্পানিটি, যা যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনা, দালানকোঠা নির্মাণ ও ভূমি উন্নয়নে ব্যয় হবে।

বুক বিল্ডিং পদ্ধতির নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে নিলামের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে সংরক্ষিত শেয়ার বিক্রি করা হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করা হবে আরেকটু কমে। আইপিও থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করা হবে, তা দিয়ে আন্তকোম্পানি ঋণ দেওয়া যাবে না।

নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী ২০২০ সালের ৩০ জুন তারিখে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য ছিল ২৯ টাকা ৯৯ পয়সা। পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া নিট সম্পদ ভ্যালু হয়েছে ২৭ টাকা ৭৮ পয়সা। গত পাঁচ বছরের শেয়ারপ্রতি ভারিত গড় আয় ২ টাকা ৪২ পয়সা। কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পেয়েছে জনতা ক্যাপিটাল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।

জেএমআইকে আন্তকোম্পানির ঋণ না দেওয়ার শর্ত কেন দেওয়া হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম বলেন, গ্রুপের সহযোগী কোম্পানিকে ভালো অঙ্কের ঋণ দিয়েছিল এ কোম্পানি। অনেকটা আদায়ও করেছে। ভবিষ্যতে যেন আর দেওয়া না হয়, তাই শর্ত দেওয়া হয়েছে।