আইনি সীমা লঙ্ঘন করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য টাকা দেওয়ায় এবার রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের দিকে আঙুল তুলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটি সম্প্রতি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) ৫০০ কোটি টাকার ঋণ দেয়। এ ঋণ দেওয়ার কারণে শেয়ারবাজারে ব্যাংকটির বিনিয়োগের আইনি সীমা ছাড়িয়ে যায়। এ জন্য কেন ব্যাংকটিকে জরিমানা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গত মঙ্গলবার সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোকে অন্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান। তিনি বলেন, ‘আইসিবিকে দেওয়া ঋণের মেয়াদ পূর্তি হয়েছিল। এখন আবার নতুন করে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এখানে শেয়ারবাজারে সরাসরি কোনো বিনিয়োগ করা হয়নি। তারপরও কেন বাংলাদেশ ব্যাংক এ ঋণকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হিসাবে ধরেছে, তা বোধগম্য নয়। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠির জবাব তৈরি করছি।’
সোনালী ব্যাংকের মতো আইসিবিও রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। এটি শেয়ারবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হিসেবে কাজ করে। শেয়ারবাজারে সহায়তা দিতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিভিন্ন ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে আইসিবি।
এদিকে ব্যাংক কোম্পানি আইনে বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে কোনো ব্যাংকের বিনিয়োগ ওই ব্যাংকের আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন আর্নিংসের ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। কিন্তু সোনালী ব্যাংকের বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৬০ শতাংশে।
আবার এই আইন পরিপালনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৩ সালে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, সেখানে বলা হয়েছে, শেয়ারবাজার কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিয়োজিত অপর কোনো কোম্পানি বা স্টক ডিলারকে দেওয়া ঋণের স্থিতি, মঞ্জুরীকৃত ঋণসীমা ও তাদের সঙ্গে রক্ষিত তহবিলের স্থিতি ২৫ শতাংশের হিসাবের মধ্যে পড়বে।
২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে ধরা পড়ে, আইসিবিসহ শেয়ারবাজারে সোনালী ব্যাংক যে বিনিয়োগ করেছে, তা ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে বিনিয়োগ ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময়ে আইসিবিতে সোনালী ব্যাংকের বিনিয়োগ ছিল দেড় হাজার কোটি টাকা। আইসিবিকে দেওয়া দেড় হাজার কোটি টাকার মধ্যে গত ২৬ আগস্ট ৫০০ কোটি টাকার মেয়াদ পূর্তি হয়। আইসিবি সুদসহ টাকা সোনালী ব্যাংককে ফেরত দেয়। এরপর গত ১৭ অক্টোবর সোনালী ব্যাংকের কাছে আবারও ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ চেয়ে আবেদন করে আইসিবি।
আইসিবির সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় উত্থাপিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, আইসিবিতে ৭২৫ কোটি টাকার সীমাতিরিক্ত বিনিয়োগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ক্রেডিট রেটিং বা ঋণমান বিনিয়োগযোগ্য নয়। তবে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৪৯৪তম সভায় সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঋণমানের শর্ত শিথিল করা হয়। তাতে সীমাতিরিক্ত বিনিয়োগ থাকার পরও আইসিবিকে ৩৬০ দিন মেয়াদে ৫০০ কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যার সুদের হার ঠিক হয় সাড়ে ৭ শতাংশ। পর্ষদে অনুমোদনের পর আইসিবিকে চলতি মাসে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দেয় সোনালী ব্যাংক। ৯ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে সোনালী ব্যাংক জানায়, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য আইসিবিকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে সোনালী ব্যাংক। শেয়ারবাজার চাঙা ও টেকসই করার জন্য রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।