বড় পতনে ডিএসইর সূচক বছরের সর্বনিম্ন অবস্থানে

গতকালের দরপতনে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এক দিনেই কমেছে পৌনে ২ শতাংশ বা ৯৫ পয়েন্ট।

শেয়ারবাজারে আবারও বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে গতকাল বুধবার। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এক দিনেই পৌনে ২ শতাংশ বা ৯৫ পয়েন্ট কমেছে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক কমেছে ৩০২ পয়েন্ট বা প্রায় ২ শতাংশ।

মঙ্গলবার শবে বরাতের বন্ধের পর গতকাল সকালে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় সূচকের পতন দিয়ে, দিন শেষও হয়েছে বড় পতনে। তাতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ফিরে গেছে তিন মাস আগের অবস্থানে। গতকাল দিন শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৭৮ পয়েন্টে। চলতি বছরে এটিই এ সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ডিএসইএক্স সূচক ৫ হাজার ২১৮ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে শুরু করায় এবং সরকারের দিক থেকে সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন নির্দেশনা জারির ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও একধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এমনিতেই কিছুদিন ধরে শেয়ারবাজারের সূচক নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। লেনদেনও হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লকডাউন গুজব ও আতঙ্ক ভর করেছে। বাধ্য হয়ে গত ২২ মার্চ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, করোনাকালে ব্যাংক সচল থাকলে শেয়ারবাজারের লেনদেনও চালু থাকবে। এর মধ্যে গতকাল আবারও বড় ধরনের দরপতনে ভালো-মন্দনির্বিশেষে সব শেয়ারের দাম কমেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় এক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, করোনার আতঙ্কে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বেড়ে গেছে। অনেকে লোকসানেও শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ সময়ে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগও কম। ফলে বাজারের বিক্রির চাপ সামাল দেওয়ার মতো ক্রয়াদেশ আসছে না।

জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী প্রথম আলোকে বলেন, করোনার সংক্রমণ নতুন করে আবার বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ারের দাম ও সূচক কমতে থাকায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিক্রির প্রবণতাও বেড়ে গেছে। ফলে বাজারে বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, বাছবিচার না করে আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দিলে তাতে বিনিয়োগকারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন।

ঢাকার বাজারে গতকাল দরপতনের ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে লেনদেন হওয়া ৩৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ বা ১১টির দাম বেড়েছে। দাম কমেছে ২৫৭টির বা ৭৪ শতাংশের। আর অপরিবর্তিত ছিল ৮০টির বা প্রায় ২৩ শতাংশের দাম। সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেনের পরিমাণও। ঢাকার বাজারে গতকাল দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫৬০ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৭৫ কোটি টাকা কম। চট্টগ্রামের বাজারে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৭ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৪ কোটি টাকা কম।

লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের বাজার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকালের বাজারে লেনদেনের ক্ষেত্রে আধিক্য ছিল বিবিধ খাতের। ডিএসইতে লেনদেনের ১৯ শতাংশ ছিল বিবিধ খাতের লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর। লেনদেনে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ওষুধ খাত। ঢাকার বাজারের মোট লেনদেনের ১৫ শতাংশ ছিল ওষুধ খাতের লেনদেন হওয়া ৩০টি কোম্পানির।