রেকর্ড মুনাফা করে রেকর্ড লভ্যাংশ লাফার্জহোলসিমের

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জহোলসিম। পাশাপাশি এ দেশে ব্যবসা শুরুর পর গত বছর সর্বোচ্চ আয় করেছে কোম্পানিটি। সোমবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে ২০২১ সালের জন্য ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়, যার পুরোটাই নগদ লভ্যাংশ। ২০০৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর এটিই কোম্পানিটির সর্বোচ্চ লভ্যাংশ। এর আগে কখনোই লাফার্জহোলসিম বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দেয়নি।

কোম্পানিটি গত বছর কর–পরবর্তী ৩৮৮ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা করেছে। এ মুনাফা থেকে লভ্যাংশ বাবদ কোম্পানিটি বিতরণ করবে ২৯০ কোটি টাকা।

পর্ষদ সভা শেষে গতকাল কোম্পানিটি তাদের আর্থিক প্রতিবেদন ও লভ্যাংশসংক্রান্ত তথ্য জানিয়েছে। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কোম্পানিটি গত বছর (২০২১ সালে) কর–পরবর্তী ৩৮৮ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা করেছে। আগের বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালে কোম্পানিটির মুনাফা ছিল ২৩৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ১ বছরের ব্যবধানে লাফার্জহোলসিমের মুনাফা বেড়েছে প্রায় ৬৪ শতাংশ। রেকর্ড মুনাফা থেকে গত বছরের জন্য শেয়ারধারীদের ২৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। তাতে লভ্যাংশ বাবদ কোম্পানিটির খরচ হবে ২৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ মুনাফার প্রায় ৭৫ শতাংশই কোম্পানিটি লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে দেবে শেয়ারধারীদের মধ্যে।

গত বছর শেষে কোম্পানিটি ২ হাজার ৫৩ কোটি টাকার ব্যবসা বা আয় করেছে। ২০০৬ সালে উৎপাদন কার্যক্রম শুরুর পর এটিই কোম্পানিটির সর্বোচ্চ আয়।

কোম্পানিটি ব্যবসার ক্ষেত্রেও গত বছর নতুন রেকর্ড করেছে। গত বছর শেষে কোম্পানিটি ২ হাজার ৫৩ কোটি টাকার ব্যবসা বা আয় করেছে। ২০০৬ সালে উৎপাদন কার্যক্রম শুরুর পর এটিই কোম্পানিটির সর্বোচ্চ আয়। ২০২০ সালে কোম্পানিটির আয় ছিল ১ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ১ বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ।
এদিকে লভ্যাংশ ঘোষণার দিনে শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দরপতন হয়েছে। এদিন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৪০ পয়সা কমে দাঁড়িয়েছে ৭৬ টাকায়।

২০১৯ সালে এসে লাফার্জ এ দেশের কার্যক্রম পরিচালনাকারী সিমেন্ট খাতের অপর বহুজাতিক কোম্পানি হোলসিম কিনে নেয়। হোলসিম যুক্ত হওয়ার পর কোম্পানিটির নাম বদলে হয় লাফার্জহোলসিম।

২০০৬ সালে উৎপাদন শুরু করলেও ২০০৮ সালে এসে ভারতে মামলাজনিত কারণে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় কোম্পানিটির। তিন বছর উৎপাদন বন্ধ থাকার পর ২০১১ সাল থেকে কোম্পানিটি পুনরায় উৎপাদন শুরু করে। ২০১৯ সালে এসে লাফার্জ এ দেশের কার্যক্রম পরিচালনাকারী সিমেন্ট খাতের অপর বহুজাতিক কোম্পানি হোলসিম কিনে নেয়। হোলসিম যুক্ত হওয়ার পর কোম্পানিটির নাম বদলে হয় লাফার্জহোলসিম। একই কোম্পানি হলেও লাফার্জ ও হোলসিম আলাদা আলাদা ব্র্যান্ড নামে এ দেশের বাজারে সিমেন্ট বিক্রি করে থাকে। গত বছর কোম্পানিটি নতুন করে চুনাপাথরের ব্যবসা শুরু করে। এ ব্যবসা থেকে গত বছর ভালো মুনাফা করেছে কোম্পানিটি। যদিও আদালতের নির্দেশে চুনাপাথরের ব্যবসা বর্তমানে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

গ্রিনফিল্ড কোম্পানি হিসেবে লাফার্জ বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৩ সালে। আর কোম্পানিটির উৎপাদন শুরু করে ২০০৬ সালে।

লাফার্জ বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সর্বশেষ গ্রিনফিল্ড কোম্পানি। গ্রিনফিল্ড কোম্পানি বলতে সেসব কোম্পানিকে বোঝানো হয়, যেসব কোম্পানি কার্যক্রম শুরুর আগে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে পুঁজি সংগ্রহ করে। তাই ২০০৬ সালে উৎপাদন শুরু হলেও ২০০৩ সালে লাফার্জ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।