শেয়ারবাজারে যেভাবে কালোটাকা সাদা করতে পারবেন
১ লাখ টাকা সাদা করতে ২৬ হাজার ২৫০ টাকা কর-জরিমানা দিতে হবে
শেয়ার কেনার পর এক মাসের মধ্যে জানাতে হবে
এনবিআর বিশেষ ফরম ছেপেছে
টাকার উৎস কেউ জানতে চাইবে না
শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ পরপর দ্বিতীয় বছরের মতো দেওয়া হলো। এবার করের হার যেমন বাড়ানো হয়েছে, তেমনি জরিমানাও আরোপ করা হয়েছে। গতবারের মতো শুধু ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগটি নেই। আপনি শেয়ারবাজারে যত টাকা নিয়ে যাবেন, তার ওপর ২৫ শতাংশ কর দিতে হবে। আবার ওই করের ওপর ৫ শতাংশ জরিমানাও দিতে হবে। ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
সব মিলিয়ে এমন লুকানো এক লাখ টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হলে আরও ২৬ হাজার ২৫০ টাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) কর ও জরিমানা হিসেবে দিতে হবে।
ইতিমধ্যে শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগ করার জন্য বিশেষ ফরম তৈরি করেছে এনবিআর। এ ছাড়া এনবিআর কীভাবে শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। কেউ যদি শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করতে চান, তাহলে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনতে হবে। শেয়ার কেনার পর এক মাসের মধ্যে এনবিআরের নির্ধারিত ফরম পূরণ করে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলে জমা দিতে হবে। পূরণ করা ফরমটিকে কালোটাকা সাদা করার ঘোষণাপত্র হিসেবে বিবেচনা করবে এনবিআর।
এনবিআরের ওই ফরমে কালোটাকার উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করা হয়নি। ওই ফরমে করদাতার নাম, ঠিকানা, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন), জাতীয় পরিচয়পত্র, ই-মেইল, যোগাযোগের নম্বর, কত টাকা কবে বিনিয়োগ করা হয়েছে, কত কর দেওয়া হয়েছে, তা উল্লেখ করার ঘর রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে কোন কোন কোম্পানির শেয়ার কেনা হয়েছে, তা-ও জানাতে হবে। এমনকি কালোটাকা বিনিয়োগকারীর স্বামী বা স্ত্রীর নামও জানতে চাওয়া হয়েছে এনবিআরের ওই ফরমে। করের টাকা পে–অর্ডার বা অটোমেটেড চালানের মাধ্যমে দিতে হবে। এনবিআর শর্ত দিয়েছে, এক বছরের মধ্যে শেয়ারের টাকা তুলে নিলে ১০ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হবে।
শেয়ারবাজারে খুব বেশি টাকা সাদা হবে বলে মনে করেন না বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শেয়ারবাজারে অতীতেও কালোটাকা গেছে, এখনো যাচ্ছে। শেয়ার কেনার সময় টাকার উৎস সম্পর্কে কখনোই জানতে চাওয়া হয় না। এর ফলে ইতিমধ্যে বিপুল কালোটাকা বিনিয়োগ হয়েছে। তা খুব একটা ঘোষণায় আসেনি। তাঁর মতে, প্রভাবশালী শ্রেণির ব্যক্তি বা পরিবারের জন্য এবারও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা হয় কম
বর্তমান সরকার তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর গত এক দশকের বেশি সময়ে শেয়ারবাজারে অন্তত চার বছর কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কোনোবারই তেমন একটা সাড়া মেলেনি। ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থবছরেও ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। প্রথম বছরে মাত্র ৮২ জন এই সুযোগ নিয়েছেন। ওই বছর সব মিলিয়ে ৩৮২ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে গেছে। পরের বছর এই সংখ্যা আরও কমে যায়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে মাত্র ৭০ জন শেয়ার কিনে ১৩০ কোটি টাকা সাদা করেছিলেন।
এরপর গত অর্থবছরে, অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০ শতাংশ কর দিয়ে এই সুযোগ দেওয়া হয়। গত মে মাস পর্যন্ত ৩৮৯ জন এই সুযোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। করোনার কারণে বিদেশে টাকা পাচারের সুযোগ কমে যাওয়ায় অনেকেই শেয়ারবাজারে গেছেন।
আহসান এইচ মনসুরের মতে, করের হার বৃদ্ধি ও জরিমানার কারণে এবারও শেয়ারবাজারে কালোটাকা সাদা করায় তেমন সাড়া মিলবে না।