সুইজারল্যান্ডকে অর্থ পাচারের কালো তালিকায় যুক্ত করার প্রস্তাব এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্টে। দেশটির বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ক্রেডিট সুইসের তথ্য ফাঁসের পর এমন প্রস্তাব উঠল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইইউ এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নিলে তা সুইজারল্যান্ডের পুরো আর্থিক খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
সোমবার ইইউ পার্লামেন্টের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি (ইপিপি) সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ইইউর সম্পর্ক পর্যালোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। একই সঙ্গে দলটি সুইজারল্যান্ডকে আর্থিক অপরাধের দিক থেকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় যুক্ত করা উচিত কি না, তা বিবেচনার জন্য ইইউকে আহ্বান জানিয়েছে।
ইউরোপের মধ্য-ডানপন্থী রাজনৈতিক দল ইপিপির অর্থনৈতিক বিষয়ের সমন্বয়কারী মার্কাস ফেরবার বলেন, সুইস ব্যাংকগুলো অর্থ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক নিয়ম সঠিকভাবে পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সুইজারল্যান্ড নিজেই একটি উচ্চ ঝুঁকির দেশে পরিণত হয়েছে। তাই ইউরোপীয় কমিশনকে অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের পরবর্তী তালিকায় সুইজারল্যান্ডের নাম যোগ করার কথা বিবেচনা করতে হবে। তা না হলে সুইজারল্যান্ডের এই সমস্যা ইউরোপের অন্য দেশগুলোর আর্থিক খাতের জন্যও সমস্যা তৈরি করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা সুইজারল্যান্ডের আর্থিক খাতে বিপর্যয় বয়ে আনবে। এখন ব্যাংক থেকে ব্যাংকে লেনদেনে তেমন কোনো কড়াকড়ি নিয়মের মধ্যে পড়তে হয় না। কিন্তু কালো তালিকায় স্থান পেলে ইরান, মিয়ানমার, সিরিয়া কিংবা উত্তর কোরিয়ার মতো আর্থিক দুর্বৃত্তায়নের জন্য অভিযুক্ত দেশগুলোর মতো সুইজারল্যান্ডকেও বাড়তি বিধিনিষেধের মধ্যে পড়তে হবে।
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ক্রেডিট সুইসের একজন কর্মী ব্যাংকটিতে এমন ১৮ হাজার সক্রিয় হিসাবের হদিস দেন যেগুলো বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে যুক্ত। এসব হিসাবের বিপরীতে অন্তত ১০ হাজার কোটি ডলার জমা রয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব দেয় ইপিপি।
ইপিপির প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি সুইজারল্যান্ডের সরকার। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে যে অর্থ পাচার, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন এবং দুর্নীতির বিষয়ে সুইজারল্যান্ড আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখে।
এদিকে ক্রেডিট সুইসে ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, প্রকাশ হওয়া তথ্যগুলো মূলত অনেক পুরোনো। এসব হিসাবের তথ্য বিচ্ছিন্নভাবে এখান-ওখান থেকে সংগ্রহ করা। ফলে তা থেকে পূর্ণাঙ্গ চিত্র মেলে না।