ওপেকের মতানৈক্যে অস্থির জ্বালানি তেলের বাজার
ওপেকের মতানৈক্যে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। সরবরাহঘাটতি হতে পারে—এ আশঙ্কায় একবার তেলের দাম বাড়ে। আবার ওপেকের সদস্যেরা স্বাধীনভাবে সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেবে—এমন শঙ্কায় কমে।
গত সোমবার তেল সরবরাহ বাড়ানো হবে কি না, এ বিষয়ে কোনো সমাধানে না পৌঁছেই বৈঠক শেষ করে রপ্তানিকারক দেশগুলোর বৈশ্বিক জোট ওপেক ও এর মিত্ররা। নতুন কোনো বৈঠকের তারিখও দেয়নি তারা। যার ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে যায়।
আগস্ট থেকে আরও ২০ লাখ ব্যারেল এবং চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত মাসিক ৪ লাখ ব্যারেল হারে তেল উৎপাদন বৃদ্ধির একটি প্রস্তাবে ওপেক প্লাস সদস্যদেশগুলো ভোট দেয় গত শুক্রবার। তবে ওই প্রস্তাবনায় বর্তমান হারে সরবরাহ কাটার যে চুক্তি বহাল আছে, তা ২০২০ সাল পর্যন্ত ধরে রাখার সুপারিশও ছিল, যে বিষয়ে একমত হতে পারেনি সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) অয়েলের আগস্টের জন্য আগাম লেনদেনের দাম ব্যারেলপ্রতি বেড়ে হয়েছে ৭৬ দশমিক ৯৮ ডলার। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন যে ওপেকের সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে তেলের দাম বাড়বে। সে ক্ষেত্রে বিক্রি না বাড়লেও দাম বাড়তে পারে। অনেক বিশ্লেষক তো মনে করছেন, আগামী বছর তেলের দাম ১০০ ডলারের মনস্তাত্ত্বিক সীমায় পৌঁছাতে পারে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যকার বিরোধের ফলে ওপেকে এই নতুন বিভেদ দেখা দিয়েছে, যার অর্থ এখন সদস্যরা সরবরাহ বাড়ালেও তেল মজুত করে রাখা হতে পারে।
তবে বিশ্লেষকেরা এও বলছেন যে তাঁরা মনে করেন না, কোনো দেশই সেই পথে যেতে চাইবে। আরেকটি সমস্যা রয়েছে, তা হলো কোভিডের নতুন নতুন যে ভেরিয়েন্ট আসছে, তা অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ও ভ্রমণের চাহিদার ওপর প্রভাব ফেলে কি না।
সৌদি আরব ও রাশিয়া আগামী আগস্ট থেকে দৈনিক তেল উত্তোলনের পরিমাণ চার লাখ ব্যারেল বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত তার উৎপাদনের বেসলাইন প্রতিদিন ৩১ লাখ ব্যারেল থেকে বাড়িয়ে ৩৮ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত উন্নীত করতে চেয়েছিল। এবং এটিই সৌদি আরবের সঙ্গে বিরোধের মূল বিষয়।
এ ছাড়া গত বছর তেল উৎপাদন সীমিত রাখার যে চুক্তি হয়েছিল, তার মেয়াদ আগামী বছরের এপ্রিলে শেষ হওয়ার কথা। সংযুক্ত আরব আমিরাত বাদে ওপেকের সদস্যভুক্ত দেশগুলো এই চুক্তির মেয়াদ আরও লম্বা সময়ের জন্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়।
গত বছরের অক্টোবরে এক বৈঠকে ওপেক প্লাস সিদ্ধান্ত নেয়, ডিসেম্বর পর্যন্ত দৈনিক ৭৭ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল কম উত্তোলন করা হবে, যা পরে জানুয়ারি থেকে কমানো হবে ৫৮ লাখ ব্যারেল। এখন চাহিদা বাড়লেও ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এটি অব্যাহত রাখার প্রস্তাব দিয়েছে ওপেক।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বর্তমান উৎপাদন স্তরে এবং ক্রমবর্ধমান চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বে দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল ঘাটতি আছে। এর অর্থ হলো মজুত থেকে এই ঘাটতি পূরণ হচ্ছে। অর্থনীতির প্রত্যাবর্তন ও চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামের ওপর এটির ক্রমবর্ধমান চাপ পড়তে পারে।