খুচরা ব্যবসার জন্য এশিয়ার ওপর নির্ভর করবে রাশিয়া

ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনে আগ্রাসনের ঘটনায় পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জেরবার হয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। এ পর্যন্ত মোট কত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তার হিসাব কষাও সহজ কাজ নয়। এতে বিশ্ববাজার থেকে অনেকটা ছিটকে পড়ার উপক্রম হয়েছে মস্কোর। নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো। জ্বালানি, খাদ্য থেকে পোশাক—সব খাতেই একই অবস্থা। এ পরিস্থিতিতে চীন, ভারত, ইরান ও তুরস্কের দিকে তাকিয়ে আছে রুশ সরকার। পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলোর শূন্যস্থান পূরণে এ দেশগুলোর ওপর ভরসা রাখছে রাশিয়া।

রিয়েল স্টেট ডেভেলপার, শপিং মল ও রিটেইল চেইন অপারেটরের প্রতিনিধিত্ব করে রাশিয়ান কাউন্সিল অব শপিং সেন্টারস (আরসিএসসি)। এরা সম্প্রতি জানিয়েছে, আরসিএসসি পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলোর বিকল্প খোঁজার বিষয়ে চারটি দেশের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করছে। রাশিয়ায় সাময়িকভাবে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি তালিকা দেশগুলোর সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে, যাতে সমতুল্য বিকল্প প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। তবে এতে সব শূন্যতা পূরণ হবে না। তারা জানিয়েছে, একই মানের ও ডিজাইনের ব্র্যান্ডের পণ্যগুলোর শূন্যতা হয়তো আংশিকভাবে পূরণ করা সম্ভব হবে। রয়টার্স সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে সরবরাহ ব্যবস্থাও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে চাইলেও রাশিয়ায় কার্যক্রম অব্যাহত রাখা অনেক সংস্থার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় রুশ নাগরিকেরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে কেনাকাটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে দেশটিতে পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। ১৮ মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহে দেশটিতে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার ১৪ দশমিক ৫ শতাংশে পৌঁছেছে। ২০১৫ সালের পর এটিই সেখানে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির রেকর্ড। এমনকি এর মধ্যে রাশিয়ায় বেশ কিছু পণ্যের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

দেশটির কয়েকটি অঞ্চলে চিনির দাম ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। সারা দেশে গড়ে দাম বেড়েছে ১৪ শতাংশ। এরপরই সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। দেশজুড়ে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এ ছাড়া রং, চা ও টয়লেট পেপারের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৪ ও ৩ শতাংশ।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আরসিএসসির বৈঠকে রুশ খুচরা বিক্রেতাদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা হয়। মেলন ফ্যাশন গ্রুপের ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর ইগর মাল্টিনস্কিকে উদ্ধৃত করে আরসিএসসি জানিয়েছে, রাশিয়ার খুচরা বিক্রেতা সংস্থাগুলোর এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো উৎপাদন ব্যয় ও উপকরণের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাও আছে।

মেলন ফ্যাশন গ্রুপ জেরিনা, বেফ্রি, লাভ রিপাবলিক ও সেলা ব্র্যান্ডের মালিক। ২০২১ সালের শেষ দিকে রাশিয়া, পূর্ব ইউরোপ ও এশিয়াজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির ৮৪৬টি স্টোর ছিল।

এদিকে রাশিয়া যুদ্ধে জড়ানোয় মধ্য এমিয়ার দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব দেশের অনেক মানুষ রাশিয়ায় থাকেন। ফলে তাঁদের প্রবাসী আয়ের বড় একটি অংশ আসে রাশিয়া থেকে। যুদ্ধের কারণে তাঁদের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব দেশ এখন বিপুল অঙ্কের প্রবাসী আয় হারাচ্ছে।

তবে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ইতিমধ্যে রাশিয়ার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া ছাড় দিয়ে ভারতের কাছে তেল বিক্রি করছে। ভারতও কম দামে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে চাহিদার খুব সামান্য পরিমাণ তেল কিনে থাকে বলে এতে বাজারে তেমন প্রভাব পড়ছে না।