ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি ৫.৪ শতাংশ

■ উন্নত দেশগুলোতে সাধারণত মূল্যস্ফীতির সহনীয় হার ধরা হয় ২ শতাংশ। সেখানে তা ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়া মানে বড় ঘটনা।

■ আগামী ১ এপ্রিল ব্রিটিশ সরকার জ্বালানির নতুন দাম নির্ধারণ করবে।

■ এরপর জ্বালানির দাম পরবর্তী কয়েক মাসে ৫০ শতাংশ বাড়তে পারে।

সারা পৃথিবীতেই মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেক দেশে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে।

গত ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। নভেম্বর মাসে যা ছিল ৫ দশমিক ১ শতাংশ। উন্নত দেশগুলোতে সাধারণত মূল্যস্ফীতির সহনীয় হার ধরা হয় ২ শতাংশ। ফলে সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়া অনেক বড় ঘটনা। এর আগে ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতির হার এর চেয়ে বেশি ছিল—৭ দশমিক ১ শতাংশ।

যুক্তরাজ্য সরকার জ্বালানির দাম বেঁধে দেয়। কিন্তু আগামী ১ এপ্রিল থেকে সরকার নতুন দাম নির্ধারণ করবে, অর্থাৎ গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়বে। এরপর জ্বালানির দাম পরবর্তী কয়েক মাসে ৫০ শতাংশ বাড়তে পারে। এই পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে চাপে পড়বে মানুষ।

এদিকে খাদ্যের দামও অনেক বেশি। এই অবস্থায় অনেক মানুষই খাদ্য ব্যয় কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে দেশটিতে খাদ্য ব্যাংক ব্যবহারের হার বেড়ে যেতে পারে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে শীতকালে মানুষ জ্বালানি ব্যয় করে ঘর গরম রাখবে, নাকি খাবারের জন্য ব্যয় করবে, এ নিয়ে দ্বন্দ্বে পড়ে যাবে। আইসল্যান্ড নামের কে সুপারশপ চেইনের স্বত্বাধিকারী রিচার্ড ওয়াকার বিবিসিকে বলেন, ‘অনেক ক্রেতার সাপ্তাহিক খাদ্য ব্যয় মাত্র ২৫ পাউন্ড। ফলে তাঁরা আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে গলদঘর্ম হয়ে যাচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, প্রকৃত মজুরি কমার সঙ্গে সর্বজনীন সুযোগ-সুবিধা হ্রাস পেলে বা খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়লে বা করহার বৃদ্ধি পেলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যায়।

যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস ডিসেম্বর মাসের এই মূল্যস্ফীতির হার ঘোষণা করেছে। এতে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যে আসবাব থেকে শুরু করে খাদ্য ও পোশাকের দাম বেড়েছে।

যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক বিবিসিকে বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে মানুষ কী ধরনের চাপের মুখে আছে, সরকার তা বোঝে। কিন্তু যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলগুলো বলছে, দেশের রোজগেরে পরিবারগুলো আর্থিক চাপে পড়ে একসঙ্গে তিন ধাক্কা সহ্য করছে।

এদিকে যুক্তরাজ্য সরকার আগামী ১ এপ্রিল থেকে করহার বৃদ্ধি করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এটি কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার শামিল হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এদিকে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড মূল্যস্ফীতি হ্রাসে ইতিমধ্যে নীতি সুদহার কমিয়েছে। কিন্তু এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাস্তবতায় বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমাতে তাদের ওপর আবারও সুদহার বাড়ানোর চাপ আসবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা

মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক উভয়সংকটে পড়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই মূল্যস্ফীতি সাময়িক হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগ্রাসী নীতি গ্রহণের প্রয়োজন নেই। কিন্তু তা দীর্ঘমেয়াদি হলে বিপদ হতে পারে। এতে বিনিয়োগের সম্ভাবনাও কমে যাবে। আবার মুদ্রানীতিতে রাশ টানা হলে বিনিয়োগে ভাটা পড়ে। পশ্চিমা দেশগুলোতে ২০১০-এর দশকে নগদ সরবরাহ অনেক বেড়ে গেলেও মূল্যস্ফীতির হার ঐতিহাসিকভাবে কম ছিল।

তবে এখনকার মূল্যস্ফীতি মূলত সরবরাহ সংকটজনিত। ফলে মুদ্রানীতির রাশ টেনে তেমন একটা লাভ হবে না বলেই অনেকে মনে করেন। বাস্তবতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বিষয়টি নির্ভর করছে সরবরাহব্যবস্থা ও রাজনৈতিক-অর্থনীতির ওপর। কোভিডের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হয়েছে। এখন সেই ক্ষতি কীভাবে কাটানো হবে, সেটাই মূল ব্যাপার।

এদিকে অমিক্রনের বাড়বাড়ন্ত চলছে। অনেক দেশ নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য আবারও ব্যাহত হচ্ছে। ফলে মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসা বা তাকে জীবনের অংশ না বানানো পর্যন্ত এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা কম বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা।