ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের প্রতিবাদে আগামীকাল বুধবার পশ্চিমবঙ্গের রাস্তায় রাস্তায় এবং পরদিন প্রতিটি ব্লক বা ইউনিয়নে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সবাইকে বিক্ষোভে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল সোমবার বিকেলে তাঁর সচিবালয় নবান্নে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
ভারতীয় রুপির ওই দুটি নোট বাতিলের প্রতিবাদে শুরু থেকেই সোচ্চার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তিন দিন আগে তিনি ঘোষণা করেন, মোদি সরকার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তাঁর বেঁধে দেওয়া সময়সীমা গতকাল সোমবার শেষ হয়েছে।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে মমতা বলেন, খুচরা টাকার অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার। বন্ধ হয়েছে চাষাবাদ, শিল্পকারখানা, বন্ধ হয়েছে গরিবের কাজ। বহু এলাকায় মানুষ আহার জোটাতে পারছেন না। কারণ, পুরোনো ৫০০ বা ১০০০ রুপির নোট কেউ নিচ্ছে না। সামান্য টাকা তোলার ব্যবস্থা বিভিন্ন ব্যাংক করলেও তাতে বিড়ম্বনা বাড়ছে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারছেন না। তাই অবিলম্বে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট দুটি পুনরায় চালু করে জনগণকে আর্থিক সংকট থেকে উদ্ধার করার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানান।
মমতা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তে কালোটাকা আরও কালো হয়েছে। নোট বাতিলের নামে মানুষের কাছে থাকা সাদাটাকা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৪ লাখ কোটি রুপি জনগণের কাছ থেকে তুলে নিয়েছে মোদি সরকার। এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামাজিক পরিকাঠামোব্যবস্থা ইতিমধ্যে ভেঙে পড়েছে। এভাবে আর্থিক সংকট চললে অচিরেই দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সব বিরোধী দলকে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। এ লক্ষ্যে তিনি ২৯ নভেম্বর লক্ষ্ণৌ, আগামী ১ ও ২ ডিসেম্বর বিহার এবং এরপর পাঞ্জাবে প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেবেন বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে রাগে-ক্ষোভে অনেকেই পুরোনো ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট ছিঁড়ে ফেলছেন।
পশ্চিমবঙ্গে গতকালও বিভিন্ন ব্যাংকে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বদলের জন্য ছিল দীর্ঘ লাইন। তবে লাইন দিয়ে মাত্র দুই হাজার টাকা বদল করে নিতে পেরেছেন অনেকে।
রুপির দুটি নোট বাতিলের কারণে বহু বাংলাদেশি পর্যটক বিপাকে পড়েছেন। বাংলাদেশ থেকে পর্যটক আসাও কমে গেছে। কারণ, মার্কিন ডলার নিয়ে এলেও তা ভাঙাতে পারার নিশ্চয়তা নেই। অনেক মানি এক্সচেঞ্জ জানিয়েছে, তাদের কাছে নতুন রুপির নোট না থাকায় তারা ডলার ভাঙাতে হিমশিম খাচ্ছে। যে কারণে পর্যটকদের ফিরে যেতে হচ্ছে।
এদিকে বিয়ের মৌসুম এসে যাওয়ায় অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। কারণ, তাঁরা কীভাবে বিয়ের বাজার সামাল দেবেন, তা নিয়ে তাঁদের চিন্তা বেড়ে গেছে।