বিপর্যয়ের মুখে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতি
দৈনিক সংক্রমণের হারে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে ইন্দোনেশিয়া। টিকাদানেও পিছিয়ে আছে তারা। শুধু ইন্দোনেশিয়া নয়, সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চিত্রই এখন অনেকটা এ রকম। তাতে এই অঞ্চলের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার মুখে। এশিয়ার এ অঞ্চলের দেশগুলো যে অদূর ভবিষ্যতে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে, তেমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। বরং অর্থনীতির আরও বেহাল হওয়ারই আশঙ্কা রয়েছে। আমেরিকার জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় এই উদ্বেগজনক খবর মিলেছে।
শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় ভারতকে ছাড়িয়ে ইন্দোনেশিয়া এখন কোভিডের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, করোনার ডেলটা রূপের দ্রুত সংক্রমণ ক্ষমতা আর সবাইকে দ্রুত কোভিড টিকা দেওয়ার ব্যাপারে সরকারি ব্যর্থতার কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ শতাংশ বেড়ে গেছে। গত বুধবার পর্যন্ত এক সপ্তাহে ওই দেশগুলোতে কোভিডে মৃতের সংখ্যা ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। মহামারির গত দেড় বছরে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধির এমন ঘটনা বিশ্বের আর কোনো অঞ্চলেই ঘটেনি। বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এমন পরিস্থিতিতেও এশিয়ার এ অঞ্চলের দেশগুলোর মাত্র ৯ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ, উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর চেয়ে তারা অনেক পিছিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ওই সব দেশে মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষকে ইতিমধ্যে টিকা দেওয়া হয়েছে।
শুধু সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে চিত্রটা একটু ভিন্ন। কারণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশেই কেবল টিকাদানের হার অনেক বেশি। তা ছাড়া বাইরের দেশ থেকে সংক্রমণে রাশ টানতে সিঙ্গাপুর অন্য সব দেশের সঙ্গে তার সীমান্ত এখনো বন্ধ করে রেখেছে।
করোনা মোকাবিলায় অর্থ বরাদ্দ করতে গিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশই এখন ক্রমবর্ধমান রাজস্ব ঘাটতির মুখে। যে সমস্যা খুব শিগগির মিটে যাবে, এমন সম্ভাবনা নেই। সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করতে গিয়ে আরও বেশি সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে এসব দেশ। তাদের মুদ্রার মান কমতে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে বেহাল অবস্থা থাইল্যান্ডের মুদ্রা বাহতের, এই মুদ্রার মান জুনের মাঝামাঝি থেকে কমেছে ৫ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবে পর্যটন–নির্ভর এই দেশের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে। অন্যদিকে ফিলিপাইনের মুদ্রা পেসোর মূল্য হ্রাস পেয়েছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মহামারির আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সামগ্রিক অর্থনীতি ছিল বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম জার্মানির পরেই। আর এখন মহামারির দাপটে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ ইন্দোনেশিয়া এ বছরে তাদের জিডিপির পূর্বাভাসের সীমা অনেকটাই কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়েছে। একই অবস্থা থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনসহ এই অঞ্চলের বহু দেশের। গত অর্থবছরে উঠে দাঁড়ালেও ভিয়েতনামের অবস্থাও মহামারি পরিস্থিতিতে তথৈবচ।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই সমস্যা থেকে খুব শিগগির বেরিয়ে আসার আলো দেখা যাচ্ছে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে মূলত ইলেকট্রনিক পণ্যের রপ্তানিই ছিল এই দেশগুলোর অর্থনীতির মেরুদণ্ড। কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধে সেই সব শিল্পকারখানা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ইলেকট্রনিক পণ্য রপ্তানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, টানা কঠোর বিধিনিষেধ চালিয়ে গেলে কাজ হবে না, বরং টিকাদানের গতি অনেক গুণ বাড়াতে হবে। তা না হলে সংক্রমণে তো রাশ টানা যাবেই না, অর্থনীতি আরও মুখ থুবড়ে পড়বে।