১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। মে মাসে দেশটির মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৫ শতাংশ, যা কিনা ২০০৮ সালের আগস্টের পর সর্বোচ্চ। ২০০৮ সালের ওই মাসে দেশটির মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
জ্বালানি ও খাদ্য বাদে কোর-মূল্য সূচক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে মে মাসে বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। ১৯৯২ সালের জুনের পর যা সর্বোচ্চ। এই বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ কারণ অন্যতম অস্থিতিশীল পণ্য হলো খাদ্য ও জ্বালানি, এই সূচকে এ দুটিকে ধরা হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি যদি ২ শতাংশের মধ্যে রাখা যায় তাহলে তা ভালো অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকেই নির্দেশ করে। ফেডারেল রিজার্ভ সে লক্ষ্যই নেয়। তবে সে লক্ষ্য ছাড়িয়ে যায় গত এপ্রিলেই। এপ্রিলে এটি আগের বছরের তুলনায় বেড়েছিল ৩ শতাংশ। অবশ্য ২০২০ সালের আগস্টে এক বৈঠকে ফেড ঘোষণা করেছিল যে সর্বাধিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারলে মুদ্রাস্ফীতি ২ শতাংশের ওপরে যেতে পারে।
মে মাসে পরিবহন টিকিটের দাম বেড়েছে ব্যাপক। ব্যবহৃত গাড়ি ও ট্রাকের দাম আগের মাসের তুলনায় ৭.৩ শতাংশ বেড়েছে। সার্বিক মূল্যস্ফীতি সূচকের এক-তৃতীয়াংশ এটির জন্যই বেড়েছে। তবে স্বাস্থ্য খাতের কিছু কিছু কম ব্যয়বহুল হয়েছে। ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী দেওয়া ওষুধের দাম এপ্রিল থেকে কমেছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। মেডিকেল কেয়ার সেবার দাম কমেছে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। তবে বেড়েছে আবাসন খরচ, এপ্রিল থেকে এই খরচ বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
যেভাবে বাড়ল যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি
গত বসন্তে যখন করোনার সংক্রমণ প্রথম ছড়িয়ে পড়ে, ভ্রমণের চাহিদা ব্যাপক হ্রাস পায়। মানুষ অনেক শিডিউল পরিবহন বাতিল করে। যাঁরা বেড়াতে যেতে চেয়েছিলেন, তাঁরা সেই পরিকল্পনা পিছিয়ে দেন। অবকাশে বিলম্বিত করে এবং বাড়িতে থাকার আদেশ কার্যকর হওয়ায় পর সবাই ঘরবন্দী হয়ে পড়ে। ফলে হু হু করে কমতে থাকে বিমানভাড়া। গত বছরের এপ্রিলে এক ধাক্কায় বিমানভাড়া আগের বছরের চেয়ে কমে যায় ২৪ শতাংশ এবং পুরো ২০ সাল হতাশার মধ্য দিয়ে কাটায় এ খাত। এভাবে বছর তো গেল। নতুন বছরে এল আগের বছরের চেয়ে তুলনা। এর মধ্যে টিকা এল। দেখা গেল এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বিমানভাড়া আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেড়ে গেল।
এমন না যে টিকিট কেনা খুব বেড়ে গেছে। তবে এখনো কিন্তু বিমানভাড়া কোভিডের আগের অবস্থার চেয়ে অনেক কম। এটি তো একটি উদাহরণ দিয়ে দেখা গেল। এমন অনেক পণ্য একইভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এ ছাড়া ব্যাপক সরকারি প্রণোদনার কারণে মানুষের হাতে অর্থ এসেছে। ক্রয় বেড়েছে।
মূল্যস্ফীতির এই হার কি উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো
মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের মধ্যে থাকা আসলে অর্থনৈতিক বিকাশের পক্ষে ভালো। ভোক্তা যখন মনে করে সামনের সময়ে আরও দাম বাড়বে, তখন বর্তমান সময়ে তার কেনাকাটার প্রবণতা বেড়ে যায়। এটি চাহিদা বাড়ায়, দাম বাড়ায়। অন্য কথায় বলা যায়, মূল্যস্ফীতি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পূর্বাভাস। যখন মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের নিচে থাকে ফেডারেল রিজার্ভ সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করে। এটি নীতি নির্ধারণী সুদের হার কমিয়ে দেয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। মন্দা রোধে এটি কাজ করে। আর যখন ফেড মূল্যস্ফীতিকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে, তখন এটি সংকুচিত আর্থিক নীতি নেয়।
ওপরে বিমানভাড়ার একটা উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। এবার ব্যবহৃত গাড়ি ও ট্রাকের দাম বৃদ্ধি দেখলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধির হার সব বিশ্লেষণ করে তা নয়। ব্যবহৃত গাড়ি ও ট্রাকের দেখা গেছে যখন দাম কমল একদম মন্দায় পড়ে গেল এ খাত। এর মানে এই নয় যে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় ব্যবহৃত গাড়ি এবং ট্রাকগুলো কম ব্যয়বহুল হয়েছিল। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি হিসেবে বরং বাস্তবে এগুলো অন্য সময়ের চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছিল, যা কখনো হয়নি। এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায় এই অবস্থা মহামারির সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ, সরবরাহ ব্যাহত হয়েছিল, নতুন গাড়ির উৎপাদন কমে গিয়েছিল।
ফেড এই অন্যান্য সরবরাহ-শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিষয়গুলোই জনসাধারণকে সতর্ক করেছে। তারা বলছে, অর্থনীতির খাতগুলো স্বাভাবিক হয়ে উঠতে সময় লাগবে। তবে এই সংকট কেটে মুদ্রাস্ফীতি এত তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে না এই বিষয়টি দৃঢ়ভাবে মনে করে ফেড।
সূত্র: ফোর্বস, দ্য ব্যালান্স, ইনভেস্টোপিডিয়া।