ঈদের পরেও চাঙা বাজার

ঢাকার বাজারের প্রধান সূচকটি গতকাল ৬৩ পয়েন্ট বা ১ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এতে সূচকটি চার মাস পর সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে।

সূত্র : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ

ঈদুল ফিতরের পর প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে গত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে গতকাল রোববার। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ১ হাজার ৪১৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর আগে ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের বছরে ঈদের পর প্রথম কার্যদিবসে ১ হাজার ২৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। ২০১০ সালের প্রায় এক যুগ পর এসে গতকাল সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ঢাকার বাজারে।

ঈদের আগে থেকেই শেয়ারবাজারে বেশ চাঙাভাব দেখা যাচ্ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৩ পয়েন্ট বা ১ শতাংশের বেশি বেড়েছে। দিন শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি প্রায় চার মাস পর আবার ৫ হাজার ৮০০ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। সবশেষ গত ২৪ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ৮১৫ পয়েন্টের অবস্থানে উঠেছিল।

ডিএসইর তথ্য বলছে, ঈদের আগে ও পরে মিলিয়ে গত ১০ দিনে ডিএসইএক্স সূচকটি প্রায় ৪০০ পয়েন্ট বেড়েছে। এর মধ্যে গত সাত কার্যদিবস একটানা সূচক বেড়েছে বাজারে। সেই সঙ্গে লেনদেনে ছিল চাঙাভাব। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত এপ্রিল থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও লটারি প্রথা তুলে দেওয়া হয়েছে। তার বদলে নিয়ম করা হয়েছে, আইপিওতে আবেদন করতে হলে প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর সেকেন্ডারি বাজারে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে। এ কারণে আইপিও আবেদনকারীদের অনেকে সেকেন্ডারি বাজারে নতুন করে বিনিয়োগ করেছেন।

আইপিওর লটারি প্রথা তুলে নেওয়ার পর ২০ মে নতুন একটি আইপিওর চাঁদা গ্রহণ শুরু হতে যাচ্ছে। ওই আইপিওতে আবেদন করতে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের ১৯ মে তারিখে নিজ নিজ বিও হিসাবে ২০ হাজার টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকতে হবে। সে হিসেবে ঈদের আগে ও পরে বাজারে বিনিয়োগ বাড়ছে।

কোম্পানিগুলো জানুয়ারি-মার্চ সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের তুলনায় বেশির ভাগ কোম্পানির আয় বেড়েছে।
মোহাম্মদ রহমত পাশা, এমডি, ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ

এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের সময় যত ফুরিয়ে আসছে, অনেকে শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ নিচ্ছেন। মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগটি আগামী ৩০ জুন শেষ হয়ে যাবে। তাই এখন শেয়ারবাজারে কিছু কালোটাকা ঢুকছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআরের) হিসাবে, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শেয়ারবাজারে ৪৩০ কোটি টাকা সাদা করেছেন ৩১১ জন বিনিয়োগকারী। অর্থবছর ফুরিয়ে আসার কারণে এর পরিমাণ আরও বাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগ করা হলে ওই টাকায় যে শেয়ার কেনা হবে, তার ওপর এক বছরের বিক্রয় নিষেধাজ্ঞা থাকবে।

এদিকে গতকাল ব্যাংক ও বস্ত্র খাতের শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির ওপর ভর করে সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেন হওয়া ৩১ ব্যাংকের মধ্যে ২৫টিরই দাম বেড়েছে। কমেছে মাত্র একটির আর অপরিবর্তিত ছিল পাঁচটির দাম। বস্ত্র খাতের লেনদেন হওয়া ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে ৪৬টিরই দাম বেড়েছে। কমেছে আটটির আর অপরিবর্তিত ছিল দুটির দাম।

বাজারের চাঙাভাবের কারণ জানতে চাইলে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রহমত পাশা প্রথম আলোকে বলেন, কোম্পানিগুলো জানুয়ারি-মার্চ সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের তুলনায় বেশির ভাগ কোম্পানির আয় বেড়েছে। বিশেষ করে ব্যাংক ও বস্ত্র খাতের আয় অনেক বেড়েছে। তাই বিনিয়োগকারীরা এখন এসব খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এ ছাড়া ব্যাংকে সুদের হার গত বছরের চেয়ে আরও কমে গেছে। তাই নতুন করে অনেকে শেয়ারবাজারে টাকা খাটাচ্ছেন।

এদিকে ১০ দিন ধরেই ঢাকার বাজারে একটানা হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ঈদের আগে-পরে মিলিয়ে গত তিন দিন এ লেনদেন ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ওপরে রয়েছে। শেয়ারের দাম বাড়তে থাকায় বাজারে লেনদেনও বাড়ছে। কারণ, দাম বাড়ায় অনেক বিনিয়োগকারীর ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। বিশেষ করে ঋণ করে যাঁরা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন, মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়ে যায়।

বাজারের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, আইপিও আবেদনের লটারি প্রথা তুলে দিয়ে নতুন বিধান করার কারণে বাজারে নতুন করে অনেক বিনিয়োগ এসেছে। ঊর্ধ্বমুখী বাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকি বাড়ানো হয়েছে।