দানে সেরা বাফেট–সরোস

ওয়ারেন বাফেট

যে যত বড় ধনী, তার দান করার সামর্থ্যও তত বেশি। কিন্তু দান করতে হলে তো ধনের চেয়ে মনের জোরটাই বেশি থাকতে হয়। সেটি কত ধনীর কতটা আছে, তা এক বড় প্রশ্ন। না হলে বিশ্বের শীর্ষ ধনী জেফ বেজোস ১৮ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের মালিক হয়েও মাত্র ১ শতাংশ অর্থ দান করবেন কেন? এ রকম ‘কঞ্জুস ধনী’ ও দানশীল ধনীদের দানের মূল্যায়ন করে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন। দাতব্য, জনহিতকর কাজ ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে ৪০০ বিলিয়নিয়ারের দানের মূল্যায়ন করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।

ফোর্বস-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমান বিশ্বে দানে সবার শীর্ষে রয়েছেন ‘বিনিয়োগ গুরু’ হিসেবে সমধিক পরিচিত বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ওয়ারেন বাফেট। নবতিপর এই ধনী এখন পর্যন্ত ৪০ বিলিয়ন বা ৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার দান করেছেন। এই দানের বর্তমান মূল্যমান প্রায় ৭৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশের ৬ লাখ ২৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার সমান বা এক বছরের বাজেটের চেয়েও বেশি। গত জুলাইয়ে বাফেট দাতব্য কাজের জন্য ২৯০ কোটি ডলার দানের ঘোষণা দেন। তিনি মূলত দান করেন  তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু ও বিশ্বের আরেক শীর্ষস্থানীয় ধনী বিল গেটস ও তাঁর স্ত্রীর নামে গঠিত অলাভজনক দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিল ও মেলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে।

জর্জ সরোস

দানের দিক থেকে বাফেটের পেছনে রয়েছেন প্রখ্যাত হেজ ফান্ড ম্যানেজার সরোস ফান্ড ম্যানেজমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা জর্জ সরোস। তিনি তাঁর নিট সম্পদের ৬৪ শতাংশই দান করেছেন জনহিতকর কাজে। জর্জ সরোসের জন্ম হাঙ্গেরিতে। ১৭ বছর বয়সে তিনি দেশ ছাড়েন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তিনি এ পর্যন্ত ৩২ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার দান করেছেন। এর মধ্যে তিনি ২০১৮ সালেই পারিবারিক ব্যবসায় থেকে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার নিয়ে নেন তাঁর ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন (ওএসএফ) নামের আন্তর্জাতিক দাতব্য নেটওয়ার্কে। ওএসএফ ন্যায়বিচার, শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য ও স্বাধীন গণমাধ্যম ইত্যাদির উন্নয়নে দান করে থাকে। বর্তমানে (৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত) সরোসের সম্পদের নিট মূল্য ৮৪০ কোটি ডলার।

ফোর্বস–এর তালিকায় থাকা ৪০০ শীর্ষ ধনীর সম্মিলিত দানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭১ বিলিয়ন বা ১৭ হাজার ১০০ কোটি ডলার। অথচ তাঁদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন বা ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার। অর্থাৎ তাঁদের সম্মিলিত সম্পদের তুলনায় দাতব্য ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে দান করা অর্থের পরিমাণ খুবই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। ফোর্বস–এর মূল্যায়নে সর্বোচ্চ ফিলানথ্রপি স্কোর ছিল ৫, যা পেয়েছেন মাত্র ১০ জন।

৭৪ বিলিয়নিয়ার তাঁদের অর্ধেক সম্পদ দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছিলেন মাত্র ১০ জন। তাঁরাই সর্বোচ্চ ১০ স্কোর করেছেন। তা-ও তাঁরা দান করেছেন নিজেদের নিট সম্পদের মাত্র ২০ শতাংশের মতো। ওয়ারেন বাফেট ও জর্জ সরোসসহ এই ১০ ধনকুবেরের সবাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তাঁরা হলেন ইনটেল করপোরেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইমেরিটাস গর্ডন মূর; কয়েকটি জনহিতকর উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাষ্ট্রের লিন শুস্টারম্যান; সিএনএনের প্রতিষ্ঠাতা টেড টার্নার; সাবেক প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবসায়ী ও সাবেক হেজ ফান্ড ব্যবস্থাপক জন আর্নল্ড; বিলিয়নিয়ার উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী এলি ব্রড; কন্টিনেন্টাল কেবলভিশনের প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান ও সিইও আমোস বার হোস্টেটার জুনিয়র; বিওকে ফিন্যান্সিয়াল করপোরেশনের চেয়ারম্যান জর্জ ব্রুস কায়জার, সাবেক হেজ ফান্ড টাইগার ম্যানেজমেন্ট ও সমাজসেবা সংগঠন রবার্টসন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান হার্ট রবার্টসন জুনিয়র।

বর্তমান বিশ্বে দানে সবার শীর্ষে রয়েছেন ‘বিনিয়োগ গুরু’ হিসেবে সমধিক পরিচিত বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ওয়ারেন বাফেট। নবতিপর এই ধনী এখন পর্যন্ত ৪০ বিলিয়ন বা ৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার দান করেছেন। এই দানের বর্তমান মূল্যমান প্রায় ৭৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশের ৬ লাখ ২৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার সমান বা এক বছরের বাজেটের চেয়েও বেশি।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ স্কোর হচ্ছে মাইক্রোসফট এবং বিল ও মেলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসসহ ১৯ জনের, যাঁরা তাঁদের সম্পদের ১০ শতাংশ থেকে ১৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত দান করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী, সমাজসেবী, সাবেক আর্থিক বিশ্লেষক ও আইনজীবী ডেভিড মার্ক রুবেনস্টাইন।

আবার যুক্তরাষ্ট্রের হেজ ফান্ড ম্যানেজার ও সমাজসেবী রেমন্ড থমাস ডালিও এবং নিউ ইংল্যান্ড প্যাট্রিয়টসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রবার্ট ক্র্যাফ্টসহ ৫৬ জন অতিধনীর স্কোর ৩। এই ধনীরা নিজেদের ৫ থেকে ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ সম্পদ দান করেছেন।
২ স্কোর ১২০ জনের। এসব ধনী তাঁদের নিট সম্পদের ১ থেকে ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ দান করেছেন। এই তালিকায় উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন মিডিয়া মুগল অপরাহ্ উইনফ্রে এবং টুইটার ও স্কয়ারের সহপ্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডোরসি।

বিশ্বের ১ নম্বর ধনী জেফ বেজোস, যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ওয়ালটন পরিবারের উত্তরাধিকারী জিম ওয়ালটন, রব ওয়ালটনসহ শীর্ষ ৪০০ বিলিয়নিয়ারের এক-তৃতীয়াংশেরই স্কোর হচ্ছে মাত্র ১। এ রকম কিপটে দাতা হলেন ১২৭ জন, যাঁরা নিজেদের মাত্র ১ শতাংশ সম্পদ দান করেছেন।

অবাক করা বিষয় হলো, ৪০০ শীর্ষ ধনীর মধ্যে ৬৮ জন কোনো ধনসম্পদ দান করেছেন কি করেননি, এমন কোনো তথ্য প্রকাশিত হয়নি বা তাঁরাও কখনো দানের কথা বলেননি। তাঁরা কেউই দান করেননি, সেটি কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। কারণ, অনেকেই নীরবে দান করে যান এবং তা গোপন রাখতে চান বলে জনশ্রুতি আছে। তবে তাঁরা দরাজ হস্তে দান করেছেন, এমনটাও জোর দিয়ে বলা যাবে না। তেমন হলে কখনো না কখনো, কোনো না কোনোভাবে তা হয়তো প্রকাশ পেত।

সূত্র: ফোর্বস।