প্রথম আলোর মূল শক্তি পাঠক। পাঠকের ভালোবাসায় প্রথম আলোর ২৩ বছর পূর্ণ হলো। ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সম্পাদক মুখোমুখি হচ্ছেন পাঠকের। প্রথম আলো সরাসরি পাঠকের কাছ থেকে জানতে চায় তাঁদের প্রত্যাশা, মতামত, অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা। চায় তাঁদের পরামর্শও। প্রিয় পাঠক, লিখে পাঠান প্রথম আলো নিয়ে আপনার জিজ্ঞাসা ও সুচিন্তিত মতামত। যারা প্রশ্ন করছেন তাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত প্রশ্নের জন্য কয়েকজনকে আমন্ত্রণ জানানো হবে জাতীয় জাদুঘরে ১৮ই নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় পাঠকের মুখোমুখি সম্পাদক অনুষ্ঠানে। সেখানে সরাসরি সম্পাদকের সামনে আপনার মূল্যবান প্রশ্ন উপস্থাপনের সুযোগ থাকছে।

পাঠকের জিজ্ঞাসা, সম্পাদকের জবাব

তানভীর সিদ্দিক টিপু
ঢাকা, বাংলাদেশ।
প্রশ্ন: পত্রিকা হিসেবে প্রথম আলো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কিংবা সাংবাদিক সমাজ—সবার কাছেই নেতৃস্থানীয়। সেখানে দাঁড়িয়ে প্রথম আলো সম্পাদকের কাছেও সাংবাদিক সমাজ নেতৃত্ব আশা করে। কিন্তু আপনি কোনো সংগঠনের সাথে যুক্ত নন। এর কি বিশেষ কোনো কারণ আছে?
মতিউর রহমান: প্রিয় তানভীর সিদ্দিক টিপু, সম্পাদক হিসেবে আমার প্রথম ও প্রধান কাজ প্রথম আলো প্রকাশ করা। সেই কাজ ভালোভাবে করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আমিনুল ইসলাম মিলন
ঢাকা, বাংলাদেশ।
প্রশ্ন: প্রথম আলো শুধু পত্রিকা নয়, এটি একটি নির্ভুল তথ্যভান্ডারও বটে। প্রথম আলোতে প্রতিদিনই চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য বিশেষ পরামর্শ পাতা চাই।
মতিউর রহমান: প্রিয় আমিনুল ইসলাম মিলন, এখন প্রতি শুক্রবার চাকরি–বাকরি নামে ক্রোড়পত্র ছাপা হচ্ছে। সেখানে চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য পরামর্শ থাকে। এ ছাড়া প্রথম আলো ডট কমে চাকরি সেকশনেও এ বিষয়ে নিয়মিত প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরামর্শ পাওয়া যাবে।
মো. সিরাজুল মোস্তফা
চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ।
প্রশ্ন: নিরপেক্ষতা সাংবাদিকতার একটি অন্যতম অপরিহার্য অনুষঙ্গ। প্রথম আলো সে জায়গায় কতটুকু এগোল?
মতিউর রহমান: প্রিয় মো. সিরাজুল মোস্তফা, নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রথম আলো কতটুকু অগ্রসর হলো, সে বিচার পাঠকের। আমরা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকতে চেষ্টা করি।
হারুনুর রশিদ
রাজবাড়ী, বাংলাদেশ।
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম। শুভেচ্ছা নেবেন। ২০ বছর ধরে প্রথম আলোর সাথেই আছি। প্রথম আলো বস্তুনিষ্ঠ ও স্বচ্ছ সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কালো বিড়াল ধরিয়ে দিতেই প্রথম আলোর অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে, বলা যায়, সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে জেল খাটতে হয়েছে। এটা কি সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতায় একটা ধাক্কা নয়? আপনি কি মনে করেন না ভবিষ্যতে কেউ অনুসন্ধানী রিপোর্ট করতে একটু হলেও ভয় পাবে? আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন—এই কামনা করি।
মতিউর রহমান: প্রিয় হারুনুর রশিদ, রোজিনা ইসলামের ঘটনাপরম্পরায় বেশ কিছু ইতিবাচক বিষয় সামনে এসেছে। বিশেষত, রোজিনার মুক্তির জন্য সারা দেশের সাংবাদিক সমাজসহ আপামর জনগণ যেভাবে এককাট্টা হয়েছে, তা বিরল। সেই সঙ্গে সাহসী সাংবাদিকতার জন্য নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামভিত্তিক সংস্থা ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড তাঁকে এ বছরের ‘ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ দিয়েছে। তিনি পুরস্কারটি পেয়েছেন সেরা অদম্য সাংবাদিক বা মোস্ট রেজিলিয়েন্ট জার্নালিস্ট শ্রেণিতে। এটা সকল সাংবাদিকের জন্য অনুপ্রেরণার। ভবিষ্যতে সাংবাদিকেরা এ ধরনের চ্যালেঞ্জ নিতে সাহসী হবেন বলে আমি মনে করি।
মোঃ শাহজাহান আলী
বগুড়া, বাংলাদেশ।
প্রশ্ন: প্রথম আলোকে জিজ্ঞাসার কিছুই নেই। নিঃসন্দেহে বলতে হয় যে প্রথম আলো একটি শ্রেষ্ঠ প্রিন্ট মিডিয়া। সংবাদমাধ্যম হিসেবে যে ধরনের বলিষ্ঠতা ও দেশপ্রেমের পরিচয় অত্যাবশ্যকীয়, প্রথম আলো তার জন্মলগ্ন থেকে সেটি খুব সততা–সাহসের সাথেই করে যাচ্ছে। বর্তমানসহ আগের সব সরকার প্রথম আলোকে বারবার হুমকি-ধমকি দেখিয়েছে। তবু প্রথম আলো মাথা নত করেনি। এ জন্য প্রথম আলোকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে হয়। প্রথম আলোর সমস্ত খবর বস্তুনিষ্ঠ ও জনগুরুত্বপূর্ণ। আমাদের চাওয়া, প্রথম আলো তার এই বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা চলমান রাখুক। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, দুর্নীতি, মানুষের অধিকার হরণ থেকে শুরু করে সমস্ত অকল্যাণকর বিধির বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার হোক। স্থানীয় সরকারের দুর্নীতি, রেলওয়ের দুর্নীতি, পরিবহন সেক্টরের অব্যবস্থাপনা, দ্রব্যমূল্যের লাগামছাড়া ঊর্ধ্বগতি, স্বাস্থ্য খাতের অরাজকতা, শিক্ষার যে অপূরণীয় ক্ষতি, সেগুলোর ওপর আরও অনুসন্ধানী রিপোর্ট করুক এবং এগুলো থেকে উত্তরণের জন্য করণীয় কী—বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্টজনদের মতামত ও সুপরামর্শ বেশি বেশি করে প্রকাশ করুক। ধর্মান্ধ, জঙ্গিগোষ্ঠী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র তুলে ধরে দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সাহসী ভূমিকা অব্যাহত রাখুক।
মতিউর রহমান: প্রিয় মো. শাহজাহান আলী, প্রথম আলোর ওপর আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আপনার যেমনটি চাওয়া, তেমন করে আমরা বস্তুনিষ্ঠ খবর সাহসের সঙ্গে দিয়ে যেতে চাই। বেশ কিছু সেক্টর উল্লেখ করে আপনি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন চেয়েছেন। আমরা আপনার মতো আমাদের অগণিত পাঠকের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করে যাব।
আশরাফ উদ্দীন রায়হান
রাজশাহী, বাংলাদেশ।
প্রশ্ন: প্রথম আলোর ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রথম আলোর সঙ্গে যুক্ত সকলকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। সত্যি বলতে, বাংলাদেশে প্রচলিত গণমাধ্যমের মধ্যে আমার মতো অনেকেরই আস্থা ও ভরসার শেষ ঠিকানা প্রথম আলো। প্রতিদিন প্রথম আলো পড়া নেশার মতো হয়ে গেছে। তাই আমাদের হলের পত্রিকারুমে দৈনিক একটা নির্দিষ্ট সময়ে প্রথম আলো পড়ি। আমাকে যেন পড়তেই হয়। অজানা এক মায়াজাল তৈরি করে ফেলেছে প্রথম আলো। আমার দুটি প্রশ্ন: ১. বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের লেখা ছাপানোর কোনো চিন্তা করা যায় কি না? যদিও চিঠিপত্র বিভাগে অনেকের লেখা ছাপানো হয়; কিন্তু উপসম্পাদকীয় অংশে ছাপানোর ব্যাপারে প্রথম আলো কি অচিরেই কোনো উদ্যোগ নিতে পারবে? ২. খুব সম্ভবত ২০১৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রথম আলো বর্তমানের ফন্টে ছাপানো হচ্ছে। আগের ফন্ট থেকে এই ফন্টে আসার কারণ কী? আর আগের ফন্ট ও বর্তমান ফন্টের নাম কী কী?
মতিউর রহমান: প্রিয় আশরাফ উদ্দীন রায়হান, প্রথম আলোতে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলব, নাগরিক সংবাদ নামে আমাদের অনলাইনে একটি সেকশন আছে, যেখানে পাঠকের বা যে কারও লেখা ছাপা হতে পারে। এ ছাড়া মতামত পাতার জন্যও আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন। আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলতে চাই, পত্রিকার সৌন্দর্য, কার্যকারিতা এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে পড়ার সুবিধা বাড়ানোর জন্য নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতাসম্পন্ন ফন্ট আমাদের তৈরি করতে হয়েছে। এতে ফন্ট ব্যবহারের কারিগরি ও ব্যবহারিক সুবিধাও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আমরা ‘আলো’ নামে একটি ফন্ট দিয়ে প্রথম আলো শুরু করেছিলাম। সর্বশেষ ব্যবহার করেছি ‘প্রথমা’ ফন্ট। সেগুলো ছিল পুরোনো প্রযুক্তির আস্কি ফন্ট। এখন আমরা সাধারণভাবে ‘সূর্য’ ফন্ট ব্যবহার করছি। এটি একটি ইউনিকোড ফন্ট। তবে বিশেষ বিশেষ সময়ে শিরোনামে আমরা ‘কাইয়ুম’ নামে একটি নকশি ফন্ট ব্যবহার করে থাকি। প্রথম আলোর প্রথম শিল্প উপদেষ্টা এবং প্রখ্যাত শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা এই ফন্টের নাম রেখেছি।
হাসান ফকরুল
ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ।
প্রশ্ন: প্রথম আলো পত্রিকাটি কোনো দলীয় পত্রিকা?
মতিউর রহমান: প্রিয় হাসান ফকরুল, প্রথম আলো কোনো দলীয় পত্রিকা নয়। আমরা স্বাধীন, দলনিরপেক্ষ ও মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা সবক্ষেত্রে বাংলাদেশের জয় দেখতে চাই।
রাজ আহমেদ
উত্তরা, ঢাকা।
প্রশ্ন: প্রথম আলোতে প্রতিদিন ‘মুক্তিযুদ্ধ এই দিনে’ ছাপা হয়। খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি। প্রথমা থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি দিন নিয়ে কোনো বই আছে? যদি না থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে বই বের করার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
মতিউর রহমান: প্রিয় রাজ আহমেদ, এ বিষয়ে আপনার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ। ভবিষ্যতে বই বের করার পরিকল্পনা আছে।
খন্দকার নাজমুস সাদত
ঢাকা, বাংলাদেশ।
প্রশ্ন: প্রিয় সম্পাদক মহাশয়, সালাম নেবেন। আমি প্রথম আলো ই-পেপারের একজন সাবস্ক্রাইবার এবং আমার বাসায় নিয়মিত প্রথম আলো রাখি। আমার ২টি অভিমত—(১) কোনো গ্রাহক যদি ই-পেপার ও প্রথম আলো পত্রিকা একত্রে কেনে, সেখানে কিছু ডিসকাউন্ট রাখা উচিত। (২) প্রথম আলো পত্রিকার ইংরেজি সংস্করণ বের করা উচিত। আমি প্রথম আলোর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করি। ধন্যবাদ।
মতিউর রহমান: প্রিয় খন্দকার নাজমুস সাদত, ই–পেপার ও প্রথম আলো একত্রে ক্রয়সংক্রান্ত আপনার প্রস্তাবটি আমরা বিবেচনা করব। আর প্রথম আলো পত্রিকার ইংরেজি সংস্করণ আছে। en.prothomalo.com সাইটে গেলে আপনি ইংরেজি সংস্করণটি দেখতে পাবেন।
আলবিনুস সরেন
নাটোর, বাংলাদেশ।
প্রশ্ন: I want more news about Indigenous communities in bangladesh. Because they are powerless . I have written some articles on this topic . How can I send my articles to Prothom Alo?
মতিউর রহমান: প্রিয় আলবিনুস সরেন, আদিবাসীদের অধিকার এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রতি আমরা আন্তরিক। আপনার লেখা আমাকেও পাঠাতে পারেন। আমার ঠিকানা: editor@prothomalo.com।