শ্রুতলেখক দেবে পিএসসি, আপত্তি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা ৩৩তম বিসিএস থেকে প্রথমবারের মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে নিজেরা শ্রুতলেখক নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান। কিন্তু এবার ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সেই সুযোগ দিচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকেই শ্রুতলেখক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা। তবে পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক বলেছেন, অতীতের বিরূপ অভিজ্ঞতাই এ সিদ্ধান্ত নিতে তাঁদের বাধ্য করেছে।

গত ৩১ মার্চ পিএসসি এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় যাঁদের শ্রুতলেখক প্রয়োজন হবে, তাঁদের পিএসসি থেকে শ্রুতলেখক দেওয়া হবে। এ জন্য আজ ৯ এপ্রিলের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অফিস চলাকালে আবেদন জমা দিতে হবে। যথাসময়ে আবেদন না পেলে শ্রুতলেখক দেওয়া হবে না।

পিএসসি শ্রুতলেখক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ২৫(বি) ধারাটি অনুসরণ করে। সেখানে বলা আছে, শ্রুতলেখককে পরীক্ষার্থীর চেয়ে নিচের শ্রেণির শিক্ষার্থী হতে হবে এবং একই বিভাগের হওয়া যাবে না। এ ধারা অনুসরণ করে বিসিএসের আগে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী যাঁকে শ্রুতলেখক হিসেবে নিয়োগ দিতে চান, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্রসহ পিএসসিতে জমা দিতে হতো।

এত দিন ধরে এই নিয়মেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা পরীক্ষা দিয়ে আসছেন। কিন্তু হঠাৎ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে তাঁরা চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগ থেকে পাস করা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আবিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন পরে এসে পিএসসি হঠাৎ করে কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল বুঝলাম না। আমরা নিজেরাও জানব না শ্রুতলেখক ঠিক কেমন হবে। আমরা চাই পিএসসি এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুক।’

শ্রুতলেখকের ক্ষেত্রে এখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন প্রসঙ্গে মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা যে শ্রুতলেখক নিয়ে আসবেন, তিনি অনেক অভিজ্ঞ হতে পারেন, যা সাংঘর্ষিক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীরা তাঁদের পছন্দের শ্রুতলেখক থেকে ঠিক করে এনে বাড়তি সুবিধা নিয়েছেন এবং তার প্রমাণ পিএসসি পেয়েছে। আর তাই নতুন করে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা বলছেন, দু–একজনের অন্যায়ের দায়ভার তাঁরা নিতে যাবেন কেন। আর পিএসসি এসব ব্যক্তির অনিয়মের শাস্তি দেয়নি কেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের আরও কিছু আপত্তি আছে। পিএসসির সরবরাহ করা শ্রুতিলেখকদের বিশ্বাসযোগ্যতা, বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর শুনে লিখতে পারার যোগ্যতার বিষয়েও তাঁরা সন্দিহান।

নাঈম আহমেদ নামের আরেক বিসিএস পরীক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিএসসি যাকে দেবে, সে আমি যা বলব, তা–ই যে লিখবে, সে নিশ্চয়তা কীভাবে পাব। হয়তো শিক্ষাগত যোগ্যতা আছে, কিন্তু সে বিসিএস মানের পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর শুনে লিখতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় কাজ করছে। এখানে বিশ্বাসযোগ্যতা বা আস্থাহীনতার একটি বিষয় আছে।’

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের এ শঙ্কার বিষয়ে অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন পিএসসির চেয়ারম্যান। তিন জানিয়েছেন, প্রশিক্ষিত ব্যক্তিদের দিয়েই শ্রুতলেখকের কাজ করা হবে। মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘আমরা সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সহকারী আমরা নিজেরাই ঠিক করে দেব। এ জন্য গার্লস গাইড ও স্কাউটের স্বেচ্ছাসেবকেরা কাজ করবেন। এ কাজের জন্য আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দেব, ভাতা দেব।’