নিয়োগের জন্য দ্বারে দ্বারে বিসিএসের ৬৮ জন

নেতিবাচক প্রতিবেদনের কারণে ৩৭তম বিসিএসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি হওয়া প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়া ৬৮ জন নিয়োগ পেতে মন্ত্রণালয়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তাঁদের দাবি, নিয়োগের জন্য তাঁরা মন্ত্রণালয়ে বারবার যোগাযোগ করলেও নিয়োগের বিষয়ে মন্ত্রণালয় সুস্পষ্ট করে কিছু বলছেও না, আবার দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছে না। এই অবস্থায় তাঁরা হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

গত বছরের ১২ জুন চূড়ান্ত ফলাফলে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ১ হাজার ৩১৪ জনকে ক্যাডার হিসেবে সুপারিশ করে। এর প্রায় নয় মাস পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ১ হাজার ২২১ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে বাদ পড়েন ৯৩ জন। তাঁদের মধ্যে কিছু প্রার্থী নিজস্ব উদ্যোগে ক্যাডারভুক্ত হলেও এখনো ৬৮ জন নিয়োগ পেতে বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারস্থ হচ্ছেন।

প্রজ্ঞাপনে নাম না আসা একাধিক প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা জানেন না, কী কারণে তাঁদের নাম গেজেটভুক্ত হয়নি। চূড়ান্ত গেজেটে তাঁরা তাঁদের নাম না দেখে হতাশায় ভেঙে পড়েছেন। তাঁরা ব্যক্তিগতভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে কোনো সদুত্তর পাননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রার্থী বলেন, তাঁর বাবা দিনমজুর। কেন নেতিবাচক প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। অনেক কষ্টে তাঁদের সংসার চলছে। বিসিএসে সুপারিশ পাওয়ার পর পরিবারে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপনে নাম না আশায় তাঁর পরিবারে সংকট তৈরি হয়েছে।

আরেক প্রার্থী বলেন, তাঁরা বাবা সরকারি প্রতিষ্ঠানে ধর্মের শিক্ষক। ধারণা করছেন, এই কারণে তাঁর নাম প্রজ্ঞাপনে আসেনি।

বাদ পড়া ওই প্রার্থীদের কয়েকজন বলেন, ৩৭তম বিসিএসে তাঁদের চাকরি হচ্ছে—এমন সম্ভাবনার পর তাঁরা আর কোনো বিসিএস বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পরীক্ষা দেননি। এক প্রার্থী প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ পান আবার সহকারী বিচারক পদেও সুপারিশ পান। নেতিবাচক প্রতিবেদনের জন্য তিনি কোনো চাকরিতেই যোগদান করতে পারেননি।

বাদ পড়া প্রার্থীরা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, তাঁদের সঙ্গে প্রজ্ঞাপন হওয়া অন্যরা যেখানে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, সেই সময় তাঁদের নাম প্রজ্ঞাপনভুক্ত হওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। আত্মীয়স্বজন চাকরির কথা জিজ্ঞাসা করলে কোনো উত্তর দিতে পারেন না। তাঁদের সঙ্গে থাকা অন্যরা ঈদের বেতন–বোনাস তুলে পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করছে আর তাঁরা চাকরি পাবেন কি না, সেই অনিশ্চয়তায় দিন পার করছেন। এই অবস্থার অবসান হওয়া দরকার।

ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রার্থীরা বলেন, একটি বিসিএসের জন্য তিন থেকে চার বছর লেগে থাকতে হয়। অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। তারপর অনেক অপেক্ষার পর ফলাফল প্রকাশিত হয়। আবার প্রজ্ঞাপন হতেও লম্বা সময় লাগে। এই অবস্থায় শুধু নেতিবাচক প্রতিবেদনের কারণে বাদ পড়লে মন ভেঙে যায়।

বাদ পড়া প্রার্থীদের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অবস্থান জানতে চাইলে একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তাঁরা আশ্বস্ত করেছেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে কাজ করে যাচ্ছেন। জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তাতে সাড়া দেননি।