চাকরি গেলে কী করবেন?

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

চাকরি চলে গেলে প্রথমেই একটি দিশেহারা পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। সেটি স্বাভাবিকও। পেটে লাথি খেলে কার ভালো লাগবে বলুন? বেশির ভাগ সময় চাকরি চলে যায় হুট করেই। তাতে হতাশাও আসে। কিন্তু হতাশায় ডুবে যাওয়াটা কোনো কাজের কথা নয়। কে জানে, হয়তো এই চাকরি চলে যাওয়াতেই আপনার জীবনের সম্ভাবনার নতুন কোনো দুয়ার খুলে যেতে পারে। হয়তো এক জায়গার ব্যর্থতাই আপনাকে একসময় পৌঁছে দেবে সাফল্যের চূড়ায়। তবে তার জন্য নিজেরও কিছু কসরত করতে হবে।

আসুন জেনে নেওয়া যাক, চাকরি চলে গেলে হতাশা কাটানোর পাশাপাশি কীভাবে নিজেকে নতুন করে প্রস্তুত করা যায়—

১. নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন
নিজের সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। এক জায়গায় আপনার চাকরি নানা কারণেই চলে যেতে পারে, কিন্তু তাই বলে আপনি ‘গুড ফর নাথিং’ হয়ে যেতে পারেন না। মনে রাখতে হবে, যে প্রতিষ্ঠানে আপনার চাকরি চলে গেছে, সেখানেও কিন্তু আপনার সামর্থ্য বিবেচনা করেই চাকরি দেওয়া হয়েছিল। তাই বেকার অবস্থাতে ইতিবাচক থাকা অত্যন্ত জরুরি। পরিশ্রম করলে এবং চেষ্টা অব্যাহত রাখলে একদিন না একদিন সফল হবেন আপনিও।

২. অস্থায়ী কাজ খুঁজুন
চাকরি হারানোর পর অস্থায়ী কাজ খোঁজা শুরু করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনার আর্থিক টানাপোড়েনের যেমন কিছুটা সমাধান হবে, তেমনি কাজে ব্যস্ত থাকলে মাথায় নেতিবাচক ভাবনাও আসবে কম। কোনো পরিশ্রমই বৃথা যায় না। অস্থায়ী কোনো কাজ যদি নিষ্ঠার সঙ্গে করেন, তবে তাতেও সাফল্য আসবে। আর অফিসের বড়কর্তা যদি দেখেন, অস্থায়ী কাজ আপনি ভালোভাবে করেছেন, তবে সেখান থেকেও এসে যেতে পারে স্থায়ী চাকরির প্রস্তাব। কারণ, সব অফিসই দক্ষ ও পরিশ্রমী কর্মীকে ধরে রাখার চেষ্টা করে।

৩. দক্ষতার উন্নতি করুন
বেকার থাকার সময়টায় ঘরে বসে না থেকে নিজের দক্ষতার উন্নতিতে মনোযোগ দেওয়া যায়। বাড়তি কোনো পড়াশোনা বা ক্যারিয়ারের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কোর্স করা যেতে পারে। এই বাড়তি পড়াশোনা কখনোই বৃথা যায় না। এতে একদিকে যেমন আপনার জীবনবৃত্তান্ত সমৃদ্ধ হবে, অন্যদিকে ফিরে পেতে পারেন নিজের হারানো আত্মবিশ্বাস। হয়তো এই বাড়তি পড়াশোনার সনদই আপনাকে পাইয়ে দেবে নতুন চাকরি।

৪. হতে পারেন স্বেচ্ছাসেবক
বেকার জীবনে কিছুদিন করতে পারেন স্বেচ্ছাসেবীর কাজ। বিনা বেতনের এই কাজে পাবেন মানসিক প্রশান্তি। মহৎ কোনো কাজে জড়ানোর তৃপ্তিও কম নয়। সেই সঙ্গে এটি আপনার জীবনবৃত্তান্তকেও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। কারণ, চাকরিদাতারা শুধু যে ‘কর্মবীর’ খোঁজেন, তা নয়। একই সঙ্গে তাদের কাছে কর্মীর সততার মূল্যও অনেক। তাই বেকার জীবনে স্বেচ্ছাসেবীর কাজ মন্দ নয়।

৫. নিজের ব্যবসা কেন নয়?
চাকরি গেলে ব্যবসার প্রতি মনোযোগ দেওয়া যেতেই পারে। নিজের ব্যবসায় স্বাভাবিকভাবেই অনেক স্বাধীনতা ভোগ করা যায়। অন্তত বসের কথায় উঠতে-বসতে হয় না। উদ্যোক্তা হলে তো আপনিই বস! তবে হ্যাঁ, ব্যবসায় আর্থিক ঝুঁকি বেশি থাকে। যদি সেই ঝুঁকি নেওয়ার সামর্থ্য আপনার থাকে এবং থাকে নিজস্ব মৌলিক ভাবনা, তবে ব্যবসা শুরু করাই যায়।

৬. যোগাযোগ ঝালিয়ে নিন
বন্ধু-বান্ধব বা পুরোনো সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগে কার্পণ্য করবেন না। চাকরি চলে গেছে ভেবে লজ্জা পাওয়ারও কিছু নেই। সোজাসাপটা বলে দিন, আপনি ক্যারিয়ারের রূপান্তর ঘটাতে চাচ্ছেন। মনে রাখবেন, সব চাকরিজীবীই কোনো না কোনো সময়ে অফিসে এমন অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। চাকরি যাওয়ার ভয় কখনো পাননি—এমন চাকরিজীবী খুঁজে পাওয়া ভার। তাই নিজেকে কখনো গুটিয়ে রাখবেন না। পুরোনো যোগাযোগ ঝালিয়ে নিতে গিয়েও কিন্তু পাওয়া যেতে পারে নতুন চাকরির সন্ধান।

তথ্যসূত্র: ফোর্বস, ক্যারিয়ার বিল্ডার ও দ্য মুজে